Ameen Qudir

Published:
2018-04-02 15:40:22 BdST

ওটিবয়,ওয়ার্ডবয়, আয়া,কোয়াক,ফার্মেসীওয়ালা যখন ক্লিনিক মালিক ও 'ডাক্তার'


সবাই ডাক্তার সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেশের তৃণমূল ; এমনকি রাজধানী ও বড় শহরে দিব্যি চিকিৎসা বানিজ্য করে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। ছবি প্রতিকী ও ফাইল থেকে নেয়া।


ডা. কামরুল হাসান সোহেল
______________________________

আমাদের দেশের আনাচেকানাচে, যত্রতত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স না নিয়ে,অনুমোদন না নিয়েই প্রাইভেট ক্লিনিক,হসপিটাল খুলে ফেলতে পারে যে কেউ,কারণ এইগুলো তদারকি করার যেন কেউ নেই। বিএমডিসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন কেউই এইগুলো রুটিন অনুযায়ী তদারকি করে না বা জনবলের অভাবে করতে পারেনা।
আর সেই সুযোগে ওটিবয়,ওয়ার্ডবয়, সিস্টার,আয়া, ব্রাদার,টেকনিশিয়ান, কোয়াক,ফার্মেসীওয়ালা সবাই মিলে দেশের আনাচে কানাচে নতুন নতুন ক্লিনিক আর হসপিটাল খুলে বসছে। আর সেইসব ক্লিনিক, হসপিটালে কোন বিএমডিসি স্বীকৃত রেজিস্টার্ড এমবিবিএস পাস কোন চিকিৎসক না থাকলেও রোগীর অভাব থাকেনা। রোগী তারা ভাগিয়ে নিয়ে আসে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে, কোয়াকরা ফুসলিয়ে রোগী নিয়ে আসে গ্রাম থেকে।

খোদ রাজধানী ঢাকা শহরে ক্রিসেন্ট হসপিটালে এইট পাস সার্জন ওটি করছে ২৩ বছর ধরে!!! এই ২৩ বছরে কি বিএমডিসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের কেউ এই হসপিটালে ভিজিট করার সুযোগ পান নাই?

আমাদের দেশের জনগণ এমবিবিএস পাস আর সরকারি চিকিৎসকদের ভুল ধরতে বা অবহেলা ধরতে যতোটা সরব কিন্তু যারা ভুয়া ডাক্তার যাদের কারণে তাদের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হতে হয় তাদের ব্যাপারে কোন এক রহস্যজনক কারণে যেন আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। অথচ সবার আগে তাদের উচিৎ প্রতিটি এলাকায় যেসব ভুয়া ডাক্তার আছে তাদের ব্যাপারে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনকে অবহিত করা।

আমাদের দেশের সাংবাদিকগণ ও সরকারি চিকিৎসকদের চিকিৎসায় অবহেলা,গাফিলতি আর কর্মস্থলে অনুপস্থিতি সহ নানা ইস্যুতে তাদের পত্রিকায় কলামের পর কলাম লিখতে যতোটা সরব দেখা যায়, নিজ নিজ এলাকার ভুয়া চিকিৎসকদের খোঁজে বের করতে,তাদের অপকর্ম এবং অপচিকিৎসায় মানুষ যে কতোটা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন,কখনো কখনো প্রাণ ও হারাচ্ছেন সেই ইস্যুতে এক কলাম লিখতেও নীরব দেখা যায়!!

স্থানীয় প্রশাসন ও ভুয়া ডাক্তার,কোয়াকদের ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয় আচরণ করেন।স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি কোন কোন ক্ষেত্রে কোয়াকদের জরিমানা না করার জন্য বা লাইসেন্সহীন ক্লিনিক, হসপিটালকে ছাড় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং তারাই আবার সরকারী চিকিৎসকদের ব্যাপারে খড়গহস্ত। উপজেলা পরিষদে প্রতি মাসের মাসিক সমন্বয় সভায় সরকারী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং তার জন্য শাস্তি দেয়ার পরামর্শ দেন।

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন ও সরকারি চিকিৎসক এবং বিএমডিসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের ব্যাপারে যতো কঠোরতা দেখান,যত সুপারভিশন করেন তার কিছুই করেনা এইসব ভুয়া চিকিৎসকদের খোঁজে বের করতে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে কোন উদ্যোগ নেন না, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হয় না, তাদের লাইসেন্স আছে কি নেই তা দেখা হয় না, চিকিৎসক আছে কি নেই, ডিপ্লোমা নার্স, ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ান সহ যা যা শর্ত অবশ্য পালনীয় তা আছে কি নেই তা দেখা হয় না। সারা দেশে ভুয়া ডাক্তার এবং লাইসেন্সহীন ক্লিনিক,হসপিটাল খোঁজে বের করার জন্য এবং ভুয়া ডাক্তারদের আইনের আওতায় আনা এবং ক্লিনিক, হসপিটাল বন্ধ করে দেয়ার জন্য বিএমডিসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শতাধিক ইনভিজিলেন্স টিম গঠন করতে পারেন যারা সারা দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে দেশকে ভুয়া ডাক্তার এবং লাইসেন্সহীন ক্লিনিক,হসপিটালের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করতে পারবেন।

বিএমডিসি রেজিস্টার্ড এমবিবিএস পাস চিকিৎসক বা সরকারি চিকিৎসকরা দেশের বারোটা বাজাচ্ছেনা, অপচিকিৎসা দিয়ে রোগীর জীবনকে সংকটাপন্ন করছেনা কিন্তু ভুয়া ডাক্তাররা তা করছে। সাধারণ জনগণ, উপজেলা প্রসাশন, সাংবাদিক,স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বেশি জোর দেয়ার কথা সারা দেশে ভুয়া চিকিৎসকদের খোঁজে বের করা, তাদের আইনের আওতায় আনা, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা, যেসব ক্লিনিক, হসপিটালের লাইসেন্স নেই, যারা অবশ্যপালনীয় শর্তাবলী মেনে চলেনা সেইসব ক্লিনিক, হসপিটাল চিহ্নিত করা এবং তা সীলগালা করে বন্ধ করে দেয়া। তাহলে দেশের জনগণ ভুয়া চিকিৎসকদের অপচিকিৎসার হাত থেকে রেহাই পেত, অযথা হয়রানির হাত থেকে রেহাই পেত, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না, ভুয়া চিকিৎসকদের ভুলভাল চিকিৎসার শিকার হয়ে হয়তো অকালে প্রাণ হারাতো না।
________________________________

ডা. কামরুল হাসান সোহেল
আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়