Ameen Qudir

Published:
2018-01-04 16:52:55 BdST

নারী ডাক্তার হয়ে যত বিড়ম্বনা




 

 

ডা. মীরা মমতাজ সাবেকা

_________________________

 

নারী আর পুরুষ কখনো সমান হতে পারবেনা, কারণ তাদের অবয়ব, প্রকৃতি, মন, মানসিকতা, চিন্তা ভাবনা, চালচলন ভিন্ন প্রকৃতির। তবে তাদের জ্ঞান, মেধা, কথা বার্তা, আচার আচরণে পার্থক্য আছে এমন প্রমাণ আজ অবধি কেউ দিতে পারেনি। তবু তাদের প্রতি অন্যের আচরনগত তারতম্য কেবল ভুক্তভোগীই জানেন।


নারী ডাক্তার হয়ে ডাক্তারি করতে গিয়ে এহেন বহু বিব্রতকর অভিজ্ঞতা কমবেশী সকল নারী ডাক্তারেরই আছে, যেমন, সিস্টার নামে ডাকা, অযথা কথা বাড়ানো বা অবান্তর প্রশ্ন করে নাযেহাল করবার চেষ্টা, রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ ইত্যাদি। “আচ্ছা আপনি ঠিক বলছেন তো, অমুকে যে বললো, আমার এ অসুবিধা অথবা আমাকে অমুক পরীক্ষা করাতে হবে”… ইত্যকার নানাবিধ অমূলক বক্তব্যে জর্জরিত করা আরকি।

 


আমি একবার উপজেলায় পদায়নপ্রাপ্ত হয়ে যোগদানের জন্য গেলাম(১৯৯৯ সন)। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভ্রূকুঞ্চিত করে অন্যদিকে তাকিয়ে বলেছিলেন “ আমার এখানে মহিলা ডাক্তার কেন?”বলা বাহুল্য তিনি একজন ডাক্তার, পুরুষ ডাক্তার। নারী পুরুষের মত “কর্মঠ” নয়। নারী একদিকে ডাক্তার, অন্য দিকে জায়া ও জননী। এই বহুমুখী কাজে তার দাপ্তরিক কাজ “বাধাগ্রস্ত” হবে বলেই ধরে নেয়া নয়। অথচ নারীর নিষ্ঠা ও সততার কমতি নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম আছে।ব্যতিক্রম কখনো উদাহরন হতে পারে না।

 


“বড় ডাক্তার”হয়েও রেহাই নেই। কিছু রোগী মহিলা ডাক্তার দেখাতে অনীহা প্রকাশ করে। তাদের ধারনা, নারীরা দক্ষ চিকিৎসক হতে পারেনা। তাই অনেকে, নিজেরা মহিলা হয়েও মহিলা ডাক্তারের সেবা গ্রহনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।
নারীজাতি চিরকাল অবহেলিত, দেশে-বিদেশে, ঘরে-বাইরে সর্বত্র। তথাপি, নারী যখন চিকিৎসক হয়, তাকে কাঠখড় পুড়িয়েই বিদ্যার্জনে ব্রতি হতে হয়। প্রশ্নপত্র আলাদা হয়না। সার্টিফিকেট এও কোন তারতম্য হয়না। ইউ কে তে কাজ করা এক নারী ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ওখানে রোগীদের কাছ থেকে কোন রকম বৈষম্যমূলক আচরণ তারা পান কিনা। উত্তর ছিল “ কখনোই না”। কারণ ওখানে একজন বিষেশজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে রোগীদের কে তিন থেকে ছয়মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

 

আমরা বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন দেখছি। পূর্বের চেয়ে বেশীসংখক নারী স্ত্রীরোগ ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করছে, যেখানে নর-নারী সব রোগীরা সেবাগ্রহণ করতে পারে। আশা করা যায়, বৈষম্য কমবে।

_________________________________


লেখক ডা. মীরা মমতাজ সাবেকা । লোকসেবী চিকিৎসক।

Neurologist & Medicine specialist. MD(Neurology), MRCP (UK)

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়