Ameen Qudir

Published:
2017-11-18 15:35:59 BdST

আমি, হাসপাতাল, মা এবং কিছু অভিজ্ঞতা মাত্র





লিনা জাম্বিল

______________________________

 

হাসপাতালে অসংখ্যবার গিয়েছি, নিজের কারণে, সন্তানের কারণে, আত্নীয়দের কারণে বা পরিচিতদের কারণে কিন্তু যতবার গিয়েছি ততবারই ভিন্ন ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা থাকে । ভিন্ন রকম অনুভুতি থাকে । অন্যরকম ভাবে জীবনের জন্য একটি শিক্ষা বা কিছু জানাশুনা থাকে।


এবারেরটা একটু কেমন যেন অন্যরকম, সত্যি অন্যরকম, কখনো ভাল লাগে, কখনো খারাপ লাগে, কখনো অবাক হই, কখনো রাগ লাগে, কখনো বকাঝকা করতে ইচ্ছে করে , কখনোবা খুব করে জিদ লাগে ।

 

তবে যে কথা না বললেই নয়, আগের থেকে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা, সেবা এবং রোগীদের ভীড় সত্যি অন্যরকম । মানে আগের তুলনাই অনেক উন্নতি হয়েছে আর সেবার মান সত্যি বলার মত যা কখনো আগে এমন ভাল সেবার মান দেখিনি ।

মানে মন্দের মাঝে কত যে ভাল তা এবারের হাসপাতালের সেবা, পরিচ্ছন্নতা এবং র্নাস ডক্টর স্টাফ এবং পরিচ্ছন্ন র্কমীদের কার্যক্রম, দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য চেষ্টা দেখেই অনুমান করতে পারি ।

 


এ ছবি দেখেই অনুমান করতে পারবেন কতটা পরিষ্কার র্বতমানের হাসপাতালের ওর্য়াডের অবস্থা । রোগীর বেডের নীচে কোন ময়লার স্তুপ নেই, কোন আর্বজনার নেই এমনকি কোন কাগজের টুকরো, খাবার দাবারের প্যাকেট, কলার খোসা এগুলো কিছুই নেই। যখন পরিস্কার করে সব ঝেরেজুরে তুলে দারুনভাবে পরিষ্কার করে বটে । সত্যিই প্রশংসনীয় ।

 

তবে আমাদের চারিদিকে সবসময়ের জন্যই অন্যদের অন্যরকম ইন্টারেস্ট ছিল । কোথা থেকে আসলাম, বিদেশী কিনা, কোন দেশের, কি খায়, কি পরে, এমন কেন? নাকে ফুল নেই কেন? বিয়ে করার পরও হাতে কানে নাকে কিছু নেই কেন !! এসব নানান প্রশ্নবানে র্জজরিত ছিলাম মাঝে মাঝে বিরক্তও হয়েছিলাম বটে । আবার অনেকের মন্তব্য আমাদের সবার চেহারা, চোখ এসব নাকি সবই এক, সবাইকেই নাকি একরকম দেখতে ।


আমাদের অভিজ্ঞতাও একেবারে নতুন । ভর্তি করার পর থাকার কোন সীট নেই, কেবিন ট্রাই করে দেখলাম সেটাও নেই, ভিআইপি হলে তো অন্য কথা অবশ্যই ।আমরা তো ভিআইপির ধারে কাছে না তাই ইচ্ছে করেই হোক বা অনিচ্ছাই হোক সব কিছু জেনেই থেকে গেলাম একেবারে ফ্লোরে , শত শত রোগী মত ।

 

সামনে পিছনে ডানে বায়ে উপরে নীচে যেখানেই তাকাই চারিদিকে রোগী আর রোগী, রোগীদের জন্যই তো হাসপাতাল, তারপরও এত এত রোগী দেখে মনে হয় এ কেমন অবাক করা পৃথিবীতে বাস করি যেখানে বাঁচার জন্য এত এত মানুষের প্রানান্ত চেষ্টা । মরতে তো হবেই সবারই, সবারই জানা তারপরও চেষ্টা যতদিন বেঁচে থাকা যায় এ সুন্দর পৃথিবীতে ।

 

 


কেউ বসে বসে গল্প করে সারাক্ষণ, কেউবা ছুটাছুটি করে সারাক্ষণ নিজে বা রোগীকে নিয়ে, কেউ পানি আনে কেউ খাবার আনে আবার কেউ কেউ অপলক দৃষ্টিতে কে কি করছে বসে বসে যেন গবেষনা করে চলে এবং নিজের জীবনের অংকগুলো মনে মনে কষতে থাকে যদি মিলে যায়, উত্তর যদি পেয়ে যায় সুন্দর জীবনের উত্তরমালা থেকে ।

 

কে আসছে কে যাচ্ছে কেউবা রক্ত দিচ্ছে কেউবা সেলাইন দিচ্ছে কেউবা ঔষধ খাচ্ছে কেউবা মোবাইল টিপে টিপে সময় কাটানোর চেষ্টা বিচিত্র একটা জগত যেন একই রুমের ভিন্ন ভিন্ন মানুষগুলোর মধ্যে ।

 

বড় ছোট, নারী পুরুষ, ছেলে মেয়ে সবারই সমাগম হয় সারাক্ষণ । খারাপ ভাল আনন্দ বেদনা সব মিলিয়েই যেন আনাগুনা করে একই রুমের হাসাপাতালের ওর্য়াডগুলোতে ।


যারা ডিউটিরত , সেবিকা , স্টাফ, ডক্টর সবার মাঝেই একটি মানবতার সেবার অন্যরকম একটা দায়বদ্ধতা পরিলক্ষিত । একেবারে ১০০% সেটা বলতে চাইনা কারণ মাঝে মাঝে রুম খালি পেয়েছি বা ডক্টর যখন কোন কারণে কাজের জন্য সেবিকাদের খোঁজ করেছে তখন দেখা গেছে , রুমে কেউ নেই কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যার কারণে রোগী এবং ডক্টর অসন্তোষ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে ।

 


তবে কিছু কিছু ব্যবহারের কারণে এমনও মনে হয়েছে, পৃথিবীতে যদি বেহায়া নম্বর ওয়ান থেকে থাকে তাহলে এ জাতিই হবে নিশ্চয় । কারণ অনেক ভিজিটরদের রোগীর কাছে আসতে মানা করলেও চুপি চুপি অনেকেই চলে এসে অযথা ভীড় করতো, যখন রুম পরিষ্কার করতো তখনও অল্পক্ষনের জন্য আসতে বা প্রবেশ করতে মানা করলেও কেই শুনতো না । অযথাই ভীড় করার মানসিকতা চরম ।


চোখ থাকতে তব অন্ধ কথাটি আবারও বার বার মনে হলো আবার। আমি অন্ত প্রতিদিন যখন হয়েক ঘন্টা করে হাসপাতালে ছিলাম তখন অনেককেই দেখতাম সময় র্পযন্ত জানেনা ।

মোবাইল ব্যবহার করে , কথা বলে কিন্তু কোনটা কার নম্বর বা কি লেখা কিছুই বুঝেনা কারণ অ, আ, ক, খ বা এ বি সি ডি এসব কিছুই তো তারা বুঝেনা তাই না বুঝাই স্বাভাবিক । তাদের জন্য টাইম বলে দেয়া, নতুন নম্বর সেভ করে দেয়া নম্বর খোঁজে দেয়া এ্গুলোও করতে হয়েছে এবার ।


কত সুখের ঘুম অনেকেই দেয় হাসপাতালে থেকে আর আমার সমযগুলো কাটে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে, কে কি করছে , কারা কি নিয়ে ব্যস্ত, তা দেখে দেখেই কয়েক ঘন্টার এমনিতেই পাড়। আমার দুচোখে এক
ফোটা কোন ঘুমই অন্তত হাসাপাতালে উঁকি ঝুঁকি দেয়নি এবং দেয়না ।

 

 


মা যখন দারুন সুখে এভাবে ঘুমাতো তখন মনে হতো সত্যি সব ব্যথা বেদনা, কষ্ট , রোগ শোক সব এভাবেই পালিয়ে যেন যায় চিরতরে চিরদিনের জন্য অন্তত মার কাছ থেকে ।


মার অসুখ বিসুখ বা রোগ ব্যাধি সব কিছুই জনমের মত করে দূরে চলে যাক সারাক্ষণ মার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এ কথাই ভাবি । কখনো ভাবি মার শরীরের দেহের সব ধরনের রোগ সমস্যা যন্ত্রনা মার কাছ থেকে মুক্তি নিয়ে আমার কাছে যদি নিয়ে আসতে পারতাম কোন অলৌকিক ক্ষমতা বলে তাহলে মার সব যন্ত্রনা কষ্ট আমার কাছে চলে আসতো তখন সব যন্ত্রনা আমার হতো মার আর কোন কষ্টই থাকতোনা ।
আজীবন এমন করেই সুুখের ঘুম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সবার মাঝে বিশেষ করে সন্তান সন্তোতি নাতি নাতনীদের মাঝে তার শক্তি মনোবল সাহস হাসিখুশি ভাবে সব যন্ত্রনাকে জয় করার কৌশল আরো বেশী বেশী করে ছড়িয়ে দিতে পারতো ।

 


মাকে যখন রক্ত দেয়া হচ্ছিল তখন এভাবেই তাকিয়ে থেকে থেকে যে তার জন্য রক্ত দিয়ে তার এ শরীরটাকে অন্তত আরো কিছুদিন বাচিঁয়ে রাখার জন্য নিজের শরীরের রক্ত দান করেছে তার মঙ্গল কামনা করে র্প্রাথনা করে চলেছে এমনই মনে হতো আমার কাছে । এর সাথে সাথে হয়তোবা আরো নানান কিছু চিন্তা করতে করতেই রক্তের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে জীবনের নানা গল্প, কাহিনী স্বপ্ন রচনা করে চলে যা সে নিজে ছাড়া আমি তুমি বা আমরা কেই জানিনা ।

 


হাসপাতালে না গেলে না থাকলে হাসপাতাল কি, কেমন, কি হয় এখানে তা কেউ বলে বুঝাতে পারবেনা । এখানে যেমন ভাল মানুষ আসে, থাকে, তেমনি খারাপ মানুষেরও অভাব নেই, সুযোগ সন্ধানী অনেকেই আনাগুনা করে নিয়মিত । কারোও কাপড় চুরি হয়ে যায়, পানি খাবার এসবও চুরি হয়ে যায় , আজব এবটি জায়গা । কেই কেই ভাল হয়ে গেছে ইচ্ছে করলে সে বাড়ী যেতে পারবে কিন্তু ইচ্ছে করেই রোগী হয়ে থেকে যেতে চায় । কারণ আছে অনেক । এখানে যারা দূরে বাড়ী, গ্এরাম থেকে যারা্ আসে, হাসপাতালের খাবার খেতে যদি কোন রকম এর্লাজি না থাকে তাহলে এভাবে্েই থাকতে পারে কারণ তিন বেলা খাবার দেয়, রুটি, কলা, ডিম, ভাত, বিস্কুট, ঔষধ, সুজি সবকিছু রোগীদের দেয়, এমনও দেখেছি যেসব রোগীদের দরকার নেই তাপরও ডক্টরের কাছ থেকে লিখিয়ে নিয়ে একমাস দেড়মাস ধরে এখানে থেকে যাচ্ছে । রাতে ১০টার পরে বাসাই যাচ্ছে আবার পরের দিন সকালে ৮টার পরে নাস্তা দেয়ার সময় হলে হাসপাতালে এসে নাস্তাগুলো নিয়ে আবার কোথায় জানি হারিয়ে যায়, রাতে তার বিছানায় আরেকজনকে রোগী সেজে পাহারা দিতে রেখে যায়--কেমন আজব সব ।


কোন ভাল সুস্থ্য মানুষ যাতে রোগী সেজে হাসপাতালে থেকে আরেকজন রোগীর সেবা পাওয়ার সুযোগকে বঞ্চিত না করে সেটাই কাম্য হওয়া উচিত ।

সুন্দর সেবা সুন্দর হাসপাতাল দায়িত্বশীল স্টাফবৃন্দ সবকিছুর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এবং কিছু কিছু যে অনিয়মগুলো রয়েছে সেগুলো সাধারণ মানুষের সহযোগিতা পেলে তাও দূর করা সম্ভব । চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখে তাই মনে হলো ।

___________________________

লিনা জাম্বিল । সুলেখক।

 

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়