Ameen Qudir

Published:
2016-11-28 16:05:48 BdST

ডাক্তার বললে মরা বাচ্চা , ক্ষতিপূরণ ৭ হাজার টাকা


 

                         

জাকির মোল্লা
_____________________________
ডাক্তার বললেন, ‘‘আগেই তো বলেছিলাম, অবস্থা ভাল নয়। মা বা বাচ্চা কাউকে একটা বাঁচাতে পারব।’’
কিন্তু সেটা বললে কেমন করে চলবে। বলছিলেন শিশুটির নানা জাকির মোল্লা।
আমার ঘরেও তো ছেলেপুলে আছে। এত বয়স হল, বুঝি না জন্মের পরে বাচ্চা কেমন দেখতে হয়? আর অত বড়সড় চেহারাই বা হয় কী করে!

এ সব কথাই বলেছিলাম ওদের। কিন্তু কোনও গুরুত্ব দিল না।। খালি বলছিল, মরা বাচ্চা জন্মেছে।

এ সব সাত মাস আগের কথা। মেয়েটা পোয়াতি হয়ে আমার কাছে এসেছিল সুন্দরবনের সামশেরনগরের শ্বশুরবাড়ি থেকে। আমি থাকি জঙ্গলপুরে। খুব গরিব পরিবার আমাদের। মেয়ের যখন পেটে ব্যথা উঠল, আমরা আর দেরি করিনি। নিয়ে গিয়েছিলাম বাড়ির কাছেই গ্রামীণ হাসপাতালে। ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, পেট কেটে বাচ্চা বের করতে হবে। মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। তার উপরে জামাইটাও সঙ্গে নেই। পেট কাটতে হবে শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

সাত-পাঁচ ভাবছি, হঠাৎ কোথা থেকে যেন হাজির আমিরুল বিশ্বাস (শিশু পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সিআইডি)। সম্পর্কে আমার আত্মীয়। চোস্ত ছেলে। বলল, সোহান নার্সিংহোমে (এখানেই প্রথম মেলে শিশুপাচার চক্রের হদিস) তার নাকি খুব চেনা-জানা। ডাক্তার বিশ্বাসের সঙ্গেও নাকি ওর খুব খাতির। হাজার পাঁচেক টাকায় সব ব্যবস্থা করে দেবে আমিরুল। সব শুনে যেন ধড়ে প্রাণ পেলাম।

আমিরুলই অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে পাঠাল মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। খরচ নিল না। আমরা তো তখন ভাবছি, হাতে চাঁদ পেয়েছি। যাই হোক, মেয়েটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আমরা তাড়াতাড়ি ৬ কিলোমিটার দূরে সোহান নার্সিংহোমে পৌঁছলাম। ডাক্তারবাবুর কী মিষ্টি ব্যবহার। অভয় দিয়ে বললেন, পেট কাটাকাটির দরকার নেই।

মেয়েকে নিয়ে দোতলায় উঠে গেল ওরা। নীচে বসে আছি ঠায়। কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। ছটফট করছি। আমিরুলকে বললাম, কই হে, এতক্ষণ লাগছে কেন? গম্ভীর মুখে আমিরুল বলল, অবস্থা একটু গোলমেলে।

একটু পরে ডাক্তার এসে জানালেন, অবস্থা সত্যিই খারাপ। পেট কাটতেই হবে। হয় মেয়েকে বাঁচানো যাবে, নয় তো বাচ্চাকে। তখন হাউ হাউ করে কাঁদছি। বললাম, ডাক্তারবাবু আপনি মাই বাপ। যা ভাল বোঝেন করুন।

কেটে গেল আরও কিছুটা সময়। থমথমে মুখে নামলেন ডাক্তার। পিছনে একজন আয়া। তার কোলে কাপড় জড়ানো বাচ্চার দেহ। ডাক্তার বললেন, ‘‘নাঃ, বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না। তবে মেয়ে ভালই আছে।’’

চোখের জল মুছে মনে হল, মরা

হোক, তবু মেয়ের ঘরে প্রথম নাতি তো বটেই। মুখখানা একটু দেখি।

কিন্তু এ কী!

বাচ্চা আকারে এত বড়সড়? আমার ওই তো রোগা-পাতলা মেয়ে। তার উপরে মায়ের পেট থেকে বাচ্চা বেরিয়ে আসার পরে রক্ত-টক্ত কিছু লেগে থাকে গায়ে। সে সবও তো মনে হচ্ছে যেন শুকিয়ে এসেছে। আর হাতে কাটা দাগটাও তো পুরনো ঠেকছে। আমরা চিৎকার করলাম। বললাম, এ বাচ্চা আমার মেয়ের হতে পারে না। আত্মীয়-বেরাদরকে ডেকে আনলাম।

প্রথমে ওরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলছিল। আস্তে আস্তে দেখলাম সুর চড়ছে। দুই মহিলা এসে হাজির। ওরা হম্বিতম্বি শুরু করল। ফোনে কাকে যেন ডেকে পাঠাল। দেখি, কয়েকটা ছেলে মোটর বাইক নিয়ে হাজির। ওদের রকমসকম ভাল ঠেকছিল না। হুমকি দিয়ে বলল, বেশি বাড়াবাড়ি না করতে।

এক মহিলা বলল, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন মরা ছেলে নিয়ে বাড়ি যাও। দাফন করতে যা খরচ হবে, সেটা দিয়ে দিচ্ছি। ৭ হাজার টাকা হাতে ধরিয়েও দিল। আর বলল, নার্সিংহোমের সব খরচ মকুব।

ভেবে দেখলাম, চিৎকার করে লাভ হবে না। ওরা দলে ভারী। মরা নাতি আর আমার মেয়েকে নিয়ে পর দিন সকালে চলে এলাম।

জামাই খুব চোটপাট করল সব শুনে। সেই থেকে মেজীবিতয়েটাও কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। আর আমি লজ্জায় মেয়ের বাড়িতে পা রাখতে পারি না।

ও হ্যাঁ, সে দিন যখন কথা কাটাকাটি চলছে নার্সিংহোমে, এক মহিলাকে দেখেছিলাম, বিস্কুটের পেটি হাতে উপরে গেল। আবার ভারী কিছু ওই পেটিতে নিয়ে নেমেও এল। এখন মনে হচ্ছে, ওই বিস্কুটের পেটিতে আমার জ্যান্ত নাতি নাকি নাতনিটাই ছিল না তো!

______________________

ডাক্তারি হয়রানির শিকার ও নবজাতক শিশুচুরির ভুক্তভোগী পরিবারের কর্তা জাকির মোল্লা এভাবেই বয়ান করেছেন মিডিয়ার কাছে । স্পট কলকাতা।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়