Ameen Qudir

Published:
2017-07-09 23:39:24 BdST

আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সের তুলনায় আমাদের জরুরি চিকিৎসা ভাল না মন্দ !




ডা. মামুনুর রশীদ সিকদার

__________________________________

ড. মোহাম্মদ আব্দুল হালিম আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। একাধারে রসায়ন এর শিক্ষক, গবেষক ও সাহিত্যিক। বর্তমানে পরিবার নিয়ে থাকে সুদূর ফ্রান্সে। সেদিন সকালে সে তার একটি লেখা ইনবক্স করলো। লেখা পড়ে রীতিমতো থ খেয়ে গেলাম।

ফ্রান্স এর মতো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্হার দেশটিতে বন্ধুর ছেলেটির জরুরী চিকিৎসা নিতে গিয়ে বন্ধুর অসহায় অবস্হার কথা শুনে দূর থেকে স্বান্তনা দেয়া ছাড়া কিবা করার থাকে। আরও জানলাম আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এ সব দেশের অনেকেই জরুরী চিকিৎসার সময় এই অবস্হার শিকার। বন্ধুর অনুমতি নিয়ে মনস্হির করলাম ব্যাপারটা এদেশের সবার সাথে শেয়ার করি। তার লেখাটি হুবুহু তুলে ধরলাম নিচে-

 

"ঈদের দিন আমাদের ছোটছেলে মুসাব তার মাথায় খুবই ব্যাথা পায়, কপালের দিকে কেটে মাথার খুলির সাদা অংশ দেখা যাচ্ছিল । প্রচন্ড রক্ত পড়তে থাকে, ওর মা ওড়না দিয়ে মাথার ঐ অংশটি চেপে ধরে থাকল । ঘটনার আকস্মিকতায় ইমারজেন্সিতে ফোন দিতেও পারছিলাম না, প্রতিবেশীর দরজায় নক করে তাকে দ্রুত আ্যম্বুলেন্স ডাকতে অনুরোধ করলাম । ৫মিনিটের মধ্যে আ্যম্বুলেন্স ও প্যারামেডিক হাজির হলো । তারা দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিল ।

তারপর ছেলেসহ আ্যম্বুলেন্সে করে নিকটস্থ হাসপাতালে গেলাম । প্যারামেডিক আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে কাউন্টারে বলে বিদায় জানাল । আমাদের অপেক্ষার পালা শুরু হল । আরও অসংখ্য রোগী আমাদের মতো অপেক্ষা করছে । এই কাউন্টারে ইনিশিয়াল চেকআপ যেমন: টেমপারেচার, প্রেশার ও ওজন মাপার পর একটি টিকিট ধরিয়ে দিল । আবার অপেক্ষার পালা । অনেকক্ষন অপেক্ষার পর বুরো অফিসে আমাদের নম্বরটি উঠল । সেখানে যেয়ে আইডি কার্ড, হেলথ কার্ড চেক করা শেষে বিশাল পৃষ্ঠার একটি বারকোডিং পেজ ধরিয়ে অপেক্ষা করতে বলল। এদিকে ছেলের মাথার ব্যান্ডেজ ছাপিয়ে রক্ত পড়ছে । ছেলেকে কোলে নিয়ে জিকির করা ছাড়া কোনো উপায় দেখলাম না । এটি হলো লিয়ন শহরে ফ্রান্স সরকারের একটি বড় হাসপাতালের শিশুদের জরুরি ওয়ার্ড । কেউ আমার ছেলেকে নিতে আসছে না দেখে অস্হির হয়ে একজন নার্সকে বললাম । তিনি অপেক্ষা করতে বললেন । এক ঘন্টা হয়ে গেল । দুই ঘন্টা হয়ে গেল । অপেক্ষা করছি আর করছি । প্রায় তিন ঘন্টা পরে একজন নার্স এসে ভিতরে নিয়ে গেলেন । ভিতরে যেয়ে আর এক জায়গায় বসতে বললেন । সেটি হলো আরেকটি ওয়েটিং রুম । ব্যাথায় আমার ছেলে কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে । প্রায় পঁচিশ মিনিট পরে ঐ নার্স এসে আমাদেরকে একটি কেবিনে নিয়ে গেলেন । তারপর কিভাবে ব্যাথা পেল তার বিস্তারিত হিষ্ট্রি নিলেন ও দরজা বন্ধ করে বাহিরে গেলেন । এরপর একজন ইন্টার্ণ ডাক্তার এলেন, কাটা জায়গাটি দেখলেন । ছেলেকে রিলাক্স করার জন্য দুইটি ঔষুধের নাম লিখে চলে গেলেন । আমরা আবার ওয়েটিং রুমে ফিরলাম । অপেক্ষা করতে লাগলাম ।

প্রায় বিশ মিনিট পরে আরেক নার্স এসে অন্য কেবিনে নিয়ে গেল । মুসাবকে ঔষুধ খাওয়ানো হলো ও সাপোজিটর দেওয়া হল যাতে সে ঘুমিয়ে পড়ে । আবার ওয়েটিং রুমে ফিরে আসলাম । প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল ছেলে ঘুমে টলোমলো । এরপর ঐ ইন্টার্ণ ডাক্তার এসে আমাদেরকে একটি মিনি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল । অক্সিজেন মাক্স পরিয়ে লোকাল এনেন্সথেসিয়া দিয়ে ডাক্তার সেলাই করা শুরু করলেন । ডাক্তার নতুন হওয়ায় সুতার বাধন দিতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হলেন, আমি তাকে সাহস দিলাম । অনেকসময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত সেলাই শেষ হলো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার ছেলে উঠে বসল । ডাক্তার বলল আরো একঘন্টা অপেক্ষা করতে । প্রায় সাত ঘন্টা পরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলাম । এর আগেও একবার কানাডায় ও ফ্রান্সে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে পাঁচ ঘন্টার অধিক জরুরি বিভাগে অপেক্ষা করতে হয়েছে । এখানের জরুরী বিভাগকে আমার কখনোই জরুরী মনে হয় নি । দেশে তো কয়েক মিনিটের অপেক্ষায় নার্স ও ডাক্তারদের লাঞ্চিত করি, হাসপাতাল ভেঙ্গে বীরপুরুষ হয়ে যাই ।

 

আমাদের গরীব দেশের জরুরী বিভাগের সাথে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের জরুরী বিভাগের তুলনা করলাম । আমাদের দেশের নার্স, ডাক্তার ও হাসপাতালের কথা চিন্তা করে আমার গর্বে বুক ভরে উঠল । একবার সিটি কলেজের এক ছাত্রকে (আইডিয়াল কলেজের ছাত্ররা তার মাথা ফাঠিয়ে দিয়েছিল) নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গিয়েছি । সাথে সাথে ২/৪ জন আয়া ও নার্স এসে তাকে বেডে নিয়ে গেল । ১০ মিনিটর মধ্যে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল । আসুন আমাদের দেশের নার্স ও ডাক্তারদেরকে সম্মান জানাই, তাদের পেশার গুরুত্বকে অনুধাবন করি । শতসীমাবদ্ধতার ভিতরে থেকেও আমরা পিছিয়ে নেই ।"

________________________
ডা. মামুনুর রশীদ সিকদার
Interventional and Clinical Cardiologist at NICVD
Studied at Sir Salimullah Medical College

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়