Ameen Qudir

Published:
2017-05-27 22:57:55 BdST

চৈতির মৃত্যু,চিকিৎসকদের উপর হামলা এবং বিচারহীনতা:একটি ব্যাবচ্ছেদ


 

 

 


ডা. রাকিব উদ্দিন
_______________________

প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী চৈতীর মৃত্যুতে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তার বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি।গত কয়েকদিন ধরে এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।ঢাবির প্রক্টর বাদী হয়ে দেশবরেণ্য অধ্যাপক ডাক্তার এবিএম আব্দুল্লাহকে ১নম্বর আসামী করে মামলা করেছেন।

 

এর আগে এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাবির ছাত্রদের কিছু উশৃঙ্খল ছেলে সেন্ট্রাল হাসপাতাল ভাংচুর করে এবং পরদিন দেশের প্রায় সকল প্রথমসারির সংবাদপত্রে ভূল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু শিরোনাম করে নিউজ করে।এখন আসি মূল কথায় , যেদিন চৈতী সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসেছিল তার ছিল প্রচন্ড জ্বর, গা ব্যাথা এবং শরীর প্রচন্ড দূর্বল আর র‍্যাশ নিয়ে।আর তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রফেসর ডা.আব্দুল্লাহ স্যার কে কল দেন।স্যার খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এসে রোগীকে দেখেন।দেখার পর তিনি সরাসরি কোন ডায়াগনোসিস এ যাননি।

সঠিক ডায়াগনোসিসের জন্য তিনি ইনভেস্টিগেশন দেন এবং সিম্পটোম্যাটিক বা উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেন।উদাহরণস্বরূপ যেমন জ্বরের জন্য প্যারাসিটেমল,দূর্বলতার জন্য স্যালাইন ইত্যাদি।

 

এরপর রোগীকে ভর্তি দিয়ে জেনারেল ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।এরপর সন্ধ্যার দিকে রিপোর্ট আসে সবাইকে অবাক করে রোগীর একিউট মাইলয়েড লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে যা খুবই খারাপ অবস্থায় পাওয়া যায়।সাথে এক্সরেতে নিউমোনিয়াও দেখা যায়।ক্যান্সার কি ন্তুএকদিনে হয়নি আরও আগে থেকেই ছিল কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত রোগী জ্বর বা ব্যাথা লাগলে নিজেই হালকা ঔষধ খেয়ে ভাল লাগলে আর ডাক্তার দেখাননি বা পরীক্ষা করাননি হোস্টেলে থাকলে যা হয় আরকি।ওখানে তো মা বাবা নেই যে এত যত্ন বা কেয়ার পাবেন।রোগীও তেমন পাত্তা দেননি।পরে যখন ক্যান্সার মারাত্নক আকার ধারণ করে ইন্টারনাল ব্লিডিং,জ্বর,দূর্বলতা বেশি হয়ে যায় তখন হাসপাতালে আনা হয়।আর রোগ ডায়াগনসিস করে বাকি সময়টুকুও পাওয়া গেলনা অবস্থা চরম অবনতি হতে থাকে আর সাথে সাথে আইসিউ তে এডমিট করা হয় এবং পরে মারা যান।আসলে সবার জ্ঞাতার্থে একটা জিনিস বলে রাখা ভাল ব্লাড ক্যান্সারের কারণে রোগিনীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একদম শূন্যের কোঠায় ছিল আর তাই নিউমোনিয়া,অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি কারণে রোগীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়।এই হল ঘটনার সারমর্ম সংক্ষেপে।এবার আসি অভিযোগের ব্যাপারে:-

১)ঢাকা ভার্সিটির প্রক্টর এবং রোগিনীর সহপাঠীদের অভিযোগ হল হয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসা ক্যান্সারের।এ ব্যাপারটা প্রফেসর ডা.আব্দুল্লাহ স্যার বিভিন্ন টকশোতে ক্লিয়ার করেছেন আমি আবার সংক্ষেপে বলি,ক্যান্সারের চিকিৎসা হল কেমোথেরাপী,রেডিওথেরাপী এসব।আর এগুলা হুট করেই শুরু করা যায়না।রোগীনির কিডনী,লিভার এবং ফিজিক্যাল ফিটনেস সব ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হয়।আর ক্যান্সারের ডিটেইলস জানার জন্য বোন ম্যারু পরীক্ষা করতে হয় এবং এই পরীক্ষারও আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় যার কোনটাই করার সময় পাওয়া যায়নি।সুতরাং ক্যান্সারের চিকিৎসা হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।শুধুমাত্র রোগীনিকে সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।আর এর মধ্যেই রোগী মারা গেল।সুতরাং এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
২)এখন ঢাবি কতৃপক্ষ বা রোগিনীর সহপাঠীরা অভিযোগ তুলছেন অবহেলা হয়েছিল।অবহেলা কখন হল?রোগিনীকে কি ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়ে ফেলে রেখেছিল??আর এই একটা রোগীর পাশে তো ২৪ঘন্টা যদি ডাক্তার বসে থাকে তাহলে আরেক রোগী অভিযোগ আনবে অবহেলার।আর রিপোর্ট আসা পর্যন্ত্য কি কি চিকিৎসা চলবে তা অর্ডার করে দেয়া হয়েছিল।

৩)ঢাবি কতৃপক্ষ আরেকটা অভিযোগ করছেন কোন একজন সার্জন বা আইসিউ চিকিৎসক বলেছিলেন নাকি ডেঙ্গু হয়েছে,ব্রেইন ড্যামেজ হয়েছে।আচ্ছা মানলাম কেউ একজন না হয় বলেছে আপনারা তো শিক্ষিত মানুষ ঢাবিতে পড়েন। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এ পড়েন আপনারা কি জানতেন না চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ডা.আব্দুল্লাহ স্যার??আপনাদের প্রক্টর জানতেন না???তো যখন আপনাদের কনফিউশন লাগলো তখন আব্দুল্লাহ স্যার থেকে ক্লারিফাই করে নিতে পারতেন তো??একটা ফোনকল ও কি স্যার কে দেয়া যেতনা??প্রক্টর তো দিতে পারতেন।তার আগেই ডাক্তার কে মারা,ভাংচুর, মামলা ঠুকে দিলেন।এই আপনাদের সর্বোচ্চ শিক্ষার বহি:প্রকাশ???স্যারকে ১নম্বর আসামী বানাতে পারলেন অথচ একবার ফোন করে যাচাই করারও প্রয়োজন মনে করলেননা।আর প্রক্টর সাহেব বলছেন মামলা না করলে ছাত্রদের দমানো যেতনা।কি হাস্যকর যুক্তি!!ওরা না আপনার ছাত্র??ছাত্রের উপরই আপনার নিয়ন্ত্রন নেই???তাহলে তো আপনার এখনই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত।মেরুদন্ডহীন শিক্ষকের কাছ থেকে ছাত্ররা আর কিই বা শিখবে।আপনার নিজস্ব বোধ বিবেচনা ছাত্রদের কাছে জিম্মি হয়ে গেল???

৩) টকশোতে ঢাবির প্রোভিসি বললেন আবেগ থেকে এসব হয়েছে!!তাহলে আবেগ থেকে যদি আপনার ছাত্ররা মানুষ খুন করে ফেলে সেটাও মাফ???আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক বলেন সকালে দেখেই ক্যান্সার বলে নাই এটা একটা বিরাট গ্যাপ!!হায়রে বাংলাদেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকের এই তাহলে ধারনা!!!রিপোর্ট না দেখেই রোগীকে বলা ক্যান্সার হয়েছে।এর আগে একাত্তর টিভিতে সাংবাদিক আফসান চৌধূরী আমাদের শ্রদ্ধেয় দূলাল স্যারকে বলেন আপনার বয়স কত!!আরও বলে আপনাদের কথা আমরা না শুনলে শুনবে কে!!আরে ভাই আপনাদের মত সাংবাদিকরাই তো কোনটা সঠিক কোনটা ভূল চিকিৎসা নির্ধারণ করে দেন সস্তা প্রচারের জন্য!!আর আপনাদের অপপ্রচারের জন্যই কিন্তুু জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।আপনারাই ভারতীয় চিকিৎসকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে,জনগণের সাথে প্রতারনা করছেন।অথচ স্বাস্থ্য সূচকে প্রায় সবখানে বাংলাদেশ ভারত থেকে এগিয়ে এগুলা আপনারা দেখেননা।আপনারা খাদিজার মৃত্যু থেকে ফিরে আসা দেখেননা।আপনারা দেখেননা কিভাবে মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু বেঁচে যায়।আপনারা দেখেননা উপজেলা,গ্রামে কি নোংরা পরিবেশে ডাক্তাররা সেবা দেন।কত অল্প সুযোগ সুবিধা যন্ত্রপাতির অভাবের মধ্যেও ডাক্তাররা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।কিভাবে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চিকিৎসকরা জরুরী সেবা দিচ্ছেন।

এবার আসি প্রাইভেট প্রাক্টিস বন্ধ এবং ডাক্তারদের মানববন্ধন:-
প্রাইভেট প্রাকটিস মানে ঐচ্ছিক।আমি সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব শেষে প্রাকটিস করছি এটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার এ ব্যাপারে আমাকে কেউ বাধ্য করতে পারেনা।এখন যেভাবে ডাক্তারদের উপর কোন তদন্ত ছাড়াই হামলা মামলা হচ্ছে আমরা খুব আতঙ্কিত।আমরা প্রাইভেট প্রাকটিস করে নিজের জীবনকে হুমকির মূখে ফেলতে পারিনা।এটাই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।আমরা ভায়োলেন্স চাইনা কারণ আমরা মানবতার সুশিক্ষায় শিক্ষিত।আমরা ভাংচুর হুমকি ধামকি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সমাধানে বিশ্বাসী নই।আমরা চাই যে মামলা হয়েছে আদালতে তা চলুক। বিজ্ঞ আদালতেই এর সমধান হোক।যা বিচার হবে মেনে নিব এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের আত্নসম্মান উদ্ধার করব ইনশাল্লাহ।

 

_______________________________

ডা. রাকিব উদ্দিন । General physician at Alight Hospital (Pvt) Ltd.and Diabetic Center.Keranihat,Satkania,CTG
Works at স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়