Ameen Qudir

Published:
2017-02-20 19:43:25 BdST

বগুড়া মেডিকেলে নারী ডাক্তারকে ঈভ টিজিং : মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতার মহোৎসব



আহির ফা হিয়ান বুবকা

__________________________

দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ সহ সরকারী হাসপাতাল গুলোতে একধরণের আপত্তিকর ঈভটিজিং গনহারে হয়েই থাকে।
কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারী ডাক্তাররা তা গায়ে মাখেন না। তারা এসবকে পাত্তা না দিয়ে রোগী সেবা করে থাকেন।

নারী ডাক্তারদের দেখলে একশ্রেনীর রোগীর আত্মীয় নামধারী বখাটে হাসপাতালের মধ্যে নানা ধরণের টিজিং করে। যেমন, নারী ডাক্তার বা নার্সিং স্টাফ পাশে থেকে হেটে গেলে তাদের আবেগ উথলে ওঠে। নানা গোপন জিনিস জানার জন্য তারা মহা ব্যাকুল হয়। গনোরিয়া টাইপ রোগের চিকিৎসা নিয়ে পর্যন্ত নিরীহ ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে। কারণ একটাই, ডাক্তার বা নার্সের জেন্ডার ফিমেইল। তিনি বিব্রত হন। আর তাতে " নিরীহ নির্দোষ " রোগীর আত্মীয়টির বা সঙ্গীদের মহা আনন্দ হয় । মজা লোটে তারা।

 

পাশে থেকে হেঁটে যাওয়া নারী ডাক্তার বা নার্সের প্রতি
এসব আপত্তিকর টিজিং নমুনা হল, " সিস্টার, বাথরুম কোথায় , একটু দেখাইবেন !

কিংবা ও দিদি, লেডিস বাথরুম কোথায় ! ( একজন পুরুষের লেডিস বাথরুম খোঁজার কথা নয় ) ।

ও দিদি লাইটের সুইচ তো খুইজা পাইতেছি না।

ও দিদি, এই রুমের ফ্যান তো ঘুরতেছে না।
দেখা যাবে শীতের মধ্যেই এই ধরণের কমেন্ট পাস করছে।

আর দিদিমনির রুপ সৌন্দর্য নিয়ে বাজে কমেন্ট পাস পুরানা অভ্যাস।

আরেকটা টিজিং হল, কোন নারী ডাক্তার পাশে দিয়ে হেঁটে গেলে আয়ার কাজ করানোর জন্য নানা অাব্দার করে বসবে। ইচ্ছাকৃতভাবে করে তারা ডাক্তারকে বিব্রত করার জন্য। এটা এখন গনরোগে পরিনত হয়েছে। হাসপাতাল সমুহ রোগীর এটেনডেন্স মুক্ত না করলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
এই বখাটেরা
বলবে, পেশাবের পটটা তো নিয়ে গেলেন না দিদি।
রোগীর অমুক জিনিস তো দিদি পরিস্কার হয় নাই।
অখচ বখাটে ঠিকই জানে, এটা লেডি ডাক্তারের কাজ নয়।

এই চিত্র কম বেশী সবারই জানা।

এসব বাস্তবে ঈভটিজিং। পুরুষ ডাক্তার দেখলে কখনওই এইসব দুর্বৃত্ত এধরণের কমেন্ট পাস করে না। আব্দারও জানায় না।

নিয়মিত হাসপাতাল সমুহে এই ঈভটিজিং চলে। নিরীহ নারী ডাক্তার ও নার্সগন সেসব সহ্য করেন।

অনেকবছর বাদে কখনও কখনও কোন নারী ডাক্তার এসব অসহ্য যন্ত্রনার প্রতিবাদ করেন।

তখনই মিডিয়া ঈভটিজারের পক্ষ নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতায় ঝাপিয়ে পড়ে।

রবিবার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমনই ঘটনা ঘটেছে।

 

এক শিক্ষানবিস নারী চিকিৎসককে ‘ঈভ টিজিং করেন রোগীর স্বজনরা। তিনি পাশে থেকে যাওয়ার সময় ও দিদি , ফ্যানের সুইচটা দেখাইয়া দিয়ে যান বলে কমেন্ট পাস করে।
নারী ডাক্তার সুইচের জন্য ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল অায়াকর্মীকে জানাতে বললে শুরু হয় বাহাস। ক্যান, আপনি দেখাইলে সমস্যার কি। আপনি কি এই হাসপাতালের লোক না । সরকার কি বেতন দেয় না আপনাকে।

লোকজন নিয়ে দুর্বৃত্তচক্র তার উপর নানা ভাবে হেনস্থা শুরু করে। যদিও ওই নারী চিকিৎসক সেখানকার দায়িত্বে ছিলেন না । তিনি অন্যত্র তার দায়িত্ব পালনে যাচ্ছিলেন।

এই ঘটনা এসব বদমাশ কখনওই কোন পুরুষ ডাক্তারের সঙ্গে করার সাহস পায় না।

অথচ দেখুন, মিডিয়া ঠিক তিলকে তাল করেছে।

কথিত এইসব ঈভটিজিং সম্পর্কে দেশের কোন মিডিয়া এক লাইনও একশ বছেরেও লেখে নাই।

কিন্তু যেই মাত্র ডাক্তাররার প্রতিবাদ করলেন সম্মিলিতভাবে, অমনি তারা রোগী ভোগান্তি , রোগীর আত্মীয়কে অপমান , মারপিট সহ নানা ইয়োলো জার্নালিজমেঝাঁপিয়ে পড়ল।


ডাক্তার প্রতিদিনের এই লেখা বাদে অন্য কোন মিডিয়ায় সত্য বাস্তবতার পক্ষে একটা লাইনও দূরবীন বা অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে খুঁজলেও পাবেন না।

সর্বত্র পাবেন ডাক্তারদের দোষ। কেন তারা ঈভটিজিংএর প্রতিবাদ করল। কেন ঈভটিজিং এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি করল। কেন নারী ডাক্তারের সহকর্মীরা প্রতিবাদী হল।

এদেশে যেন সকল হাসপাতালে নারীডাক্তার ও নার্সদের নানারকম টিজিং করার আইনী অধিকার রয়েছে। মিডিয়া পড়লেই তাই মনে হয়।
এই ঘটনায় বিভিন্ন জনপ্রিয় মিডিয়ার বিবরণ পড়ুন। দেখবেন, ঈভ টিজিং এর সত্যতাকে তারা এড়াতে পারে নি।
________________________________

 


লেখাটি ভুক্তভোগী নারী ডাক্তারগন সহ স্থানীয় সূত্রসমুহের তথ্য নিয়ে তৈরী করেছেন
অাহির ফা হিয়ান বুবকা । নির্বাহী সম্পাদক, ডাক্তার প্রতিদিন।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়