Ameen Qudir

Published:
2017-02-20 04:42:00 BdST

একের পর এক ডাক্তার রক্তাক্ত : আমরা শিরদাঁড়াহীন হয়ে যাচ্ছি



সুমন হুসাইন , ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
_____________________________


আমরা শিরদাঁড়াহীন হয়ে যাচ্ছি , আমরা অমানুষ হয়ে যাচ্ছি । হ্যাঁ, আমরা বলতে আমি এই ডাক্তার আর মেডিকেল শিক্ষার্থীদেরকেই বুঝাচ্ছি । এই আমরা এর মধ্যে আমিও একজন । সাধারণ মানুষকে আমি দোষারোপ করতে যাচ্ছি না, সে যোগ্যতাই আমাদের নেই । কিভাবে করি?

 

হ্যাঁ, এই দোষটা আপনার, এই দোষটা আমার । রাজশাহী মেডিকেলের ডাঃ অমিত খুন হলো , মাগুরায় ডাঃ সুমন সিকদার খুন হলো, ঢাকা মেডিকেলে নারী ডাক্তার নির্যাতিত হলো, আজ ময়মনসিংহ মেডিকেলের ডাঃ তন্ময় পাল এর উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হলো । এরকম হাজারখানেক ঘটনা আছে , ঘটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত ।

কেন হচ্ছে বলুনতো?
নিজের কাছে প্রশ্ন করুন ।
উত্তরটা এটা ছাড়া আর কিছু নয় - " ওকে মেরেছে, তো আমার কি? It's nothing of my Concern! আমি ঠিক আছি তো জগত ঠিক । "
ব্যস, দায় মিটে গেলো !
এ কথাটা খারাপ শুনালেও বলবো, " এই আমরা ডাক্তাররা খুব Selfish ! এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্বার্থপরতা, হিংসা । যার চর্চা সে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ই পেয়ে যায় । রাজনীতি, এটা সেটা সবকিছু থেকে এই স্বার্থপরতাটাই শিখে যায় । আর কিছু না ! "
খারাপ লাগছে শুনতে?
হ্যাঁ, খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি । এখানে একজন ডাক্তারের মৃত্যুও পলিটিক্যাল ইস্যু, গ্রুপিংয়ের টপিক্স হয় ।
প্রমাণ নিবেন?
ক'দিন রাজশাহী মেডিকেলের ডাঃ অমিত ভাই খুন হলো । এক বন্ধুকে বল্লাম, ' কি রে কেমন কি ? "
উত্তরটা কি ছিলো জানেন ? - " উনি আমাদের গ্রুপিংয়ের না । সো, এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই ! "

কোথায় নেমে গেছি আমরা বুঝতে পারছেন? কতটা নিচে? এটা রাজশাহী মেডিকেল নয়, প্রত্যেকটা মেডিকেলের কমন ব্যপার ।
আজ অন্য গ্রুপিংয়ের একজন লাঞ্ছিত হচ্ছে, আমি আড়ালে হাততালি দিই, মুচকি হাসি , শয়তানি হাসি হাসি ।

আজ বাইরের কিছু সন্ত্রাসী অন্য গ্রুপিংয়ের কাউকে মেরে যাচ্ছে ! আর আমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছি । ছাত্রলীগের বড় বড় পদবী নিয়ে, বিএমএ, স্বাচিপের ঊর্ধ্বতন পোস্টধারী হয়ে আঙ্গুল চুষছি । ও আমার রাজনীতি করেনা, সো ম্রা খাক ! আমার কি?
ভেবে দেখুন, ব্যপারটা তাই হচ্ছে । এতটা কানা হয়ে গেছি যে বুঝতেই পারছি না - ডাক্তাররা, মেডিকেল শিক্ষার্থী আমরা একটা বিশাল বড় কমিউনিটি, এরা আমারই ভাই । এদের একজন লাঞ্চিত হওয়া মানে, এটা আমাদের সবারই লাঞ্চনা, অপমান ।
" আমার বাবাকে জুতা মেরেছে, আমাকে তো কিছু বলে নি " - ব্যপারটা অনেকটা এরকমই হয়ে গেছে ।

এটা যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ধরেই রাখুন - কসাই, ব্যবসায়ী , চোর এগুলোর পাশাপাশি ডাক্তারদের উপর আরো অনেক বিশেষণই ইউজ হবে অনাগত দিনগুলোতে, আজ আরেকজন ডাক্তার লাঞ্চিত হচ্ছে, কাল আরেকজন হবে, পরশু কিংবা তারপরের কোনো একদিন কিন্ত আপনার টার্ন ! মাইন্ড ইট !

ইতিহাস তাই বলছে । আমার রাজনীতি, আমার রাজপথ, রাজনীতিতে আমার ঘাম, আমার পরিশ্রম, আমার সময় যদি আমাকে, আমাদেরকে সিকিউরিটি ব্যপারটাই না দিতে পারে, তাহলে ডাক্তাররা রাজনীতি ছাড়ুন । যারা স্বাচিপ, বিএমএ তে আছেন , তাদের আর রাজনীতি করে কি দরকার?
আর রাজনীতিটার উদ্দেশ্য যদি শুধু আপনার স্বার্থোদ্ধার হয়, তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই !

আপনি যেহেতু তেলাপোকা, তেলাপোকা হয়েই বাঁচুন ! হাতির ভাব নেওয়ার দরকার নাই ।

প্রতিবাদ না করলে কোনো শোষণই কমেনি কোনোদিন । প্রতিবাদ করে বিজয় আসেনি, এটাও হয়নি কোনোদিন । এখনো যদি ঘুমিয়ে থাকেন আপনারা, আমাদের ভবিষ্যত, আমাদের সিকিউরিটি সবকিছুই অন্ধকার । নিজের জন্য প্রতিবাদ করুন, সবাই মিলে প্রতিবাদ করুন, অন্যায়ের অবসান হবেই ।

ভাবতে অবাক লাগে, যেই মানুষগুলোর জন্য ডাক্তাররা প্রতিটাক্ষণ, প্রতিটা মূহুর্ত, নিজের ব্যক্তিগতজীবন, নিজের সব ভালোলাগাকে ইগনোর করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে , মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসছে । তাদের উপর আক্রমণ করতে , গায়ে হাত তুলতে এতটুকু হাত কাঁপে না? লজ্জ্বা করে না ? নিজেকে মানুষ বলতে ঘৃণা করে না, পশুর দল?

অবাক হয়ে যাই, গতকাল যে নন মেডিকেল বন্ধুটার জন্য সারারাত হাসপাতালে জেগে থাকি নিজের সব কাজ বাদ দিয়ে । একটা শুধু ফোন দিচ্ছে - ব্লাড ম্যানেজ করে দিচ্ছি । নিজের রক্ত, বন্ধুদের গায়ের রক্ত । স্যারদেরকে বলে অপারেশন করিয়ে দিচ্ছি, নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে দিচ্ছি - সেই মানুষগুলোকেই দেখি ডাক্তারবিরোধী স্লোগানে সবার আগে,ফেসবুকে ডাক্তারবিরোধী স্টেটাস দিচ্ছে । নিজের কাছে নিজেই লজ্জ্বা পাই তখন ।
মানুষ হও, মানুষ । করার আগে ভাবো, কত বড় পাপটাই না করছো ! নিজের ঈশ্বরের গায়ে হাত তুলছো !
লজ্জ্বা আনো মানুষ, মানুষ হও ।

__________________________

 

লেখক সুমন হুসাইন , ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়