Ameen Qudir

Published:
2017-01-16 19:04:15 BdST

ডাক্তার যখন গুন্ডার হাতে মার খায়: কই,কেউ তো তখন রীট করে না !


নাভীম কবির প্রতীক , এমবিবিএস শিক্ষার্থী
______________________________


বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রাণ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতাল আর হাসপাতালগুলোর প্রাণ হল চিকিৎসক, নার্স আর অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা।চিকিৎসা ব্যবস্থার সরাসরি দেখভাল করে থাকে চিকিৎসকরা।তাই চিকিৎসকদের উন্নতি মানে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি।কিন্তু বাংলাদেশে কি চিকিৎসকদের সেই উন্নতি হচ্ছে?ডিগ্রীর পর ডিগ্রী নিয়েও দেশের অন্যান্য পেশাজীবীদের তুলনায় অন্তত সরকারী পর্যায়ে চিকিৎসকদের প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতা আংগুল দিয়ে দেখানোর পরেও সরকার থেকে সেটা কখনোই গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি যেটা দেখা প্রয়োজন।

 

একটা সময়ে ইংরেজি প্যারাগ্রাফ লিখার ক্ষেত্রে গতানুগতিক টপিক ছিল My aim in life.জীবনের লক্ষ্য নিয়ে লিখতে গিয়ে বুঝে না বুঝে চিকিৎসক হওয়াটাই সকলে লিখত।গ্রামে গিয়ে দরিদ্রদের জন্য সেবা করার ইচ্ছার কথা।মধ্যবিত্ত পরিবারের এমবিবিএস ডাক্তার অজপাড়াগায়ে গেলে সাজসাজ রব পড়ে যেত।তাদের আতিথিয়েতায় সেই অজপাড়াগায়ের মানুষগুলোর জন্য স্বাস্থ্যসেবা দিতে দুবার ভাবতে হতনা।কেউ মনে করিয়ে দিতনা ডাক্তার দেশের মানুষের টাকায় পড়ে এসেছে।সেখানে সম্পর্ক ছিল সম্মানের,ছিল আত্নার টান।

 

সময়ের অগ্রসরতায় আজকে বুঝে বা না বুঝে ডাক্তার হতে চায় এমন aim in life লেখা শিক্ষার্থীকে খুজে পাওয়া দুরূহ হবে।কেউ যদি ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্য নিয়েও ফেলে তার লক্ষ্য সবার আগে থাকে এমবিবিএস বা বিডিএস পাশের পর পোস্টগ্রাজুয়েশন করে নেয়া।এটা যতটা না নিজের দক্ষতা বাড়াতে তার চেয়েও বিবেচ্য হয় গ্রামে পোস্টিং এড়িয়ে চলা।বিসিএস দিয়ে সরকারী সুবিধা গুলো পাওয়া যায় যেটা এখন পর্যন্ত দু বছর উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকতে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

কিন্তু এই দুই বছরে পেতে হয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা,তাদের মোসাহেবদের হম্বি তম্বি আর আমলা পর্যায়ের বৈষম্য।যোগ্যতা প্রমাণে অন্যদের মতই ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিয়ে আসলেও ক্ষমতার প্রয়োগে আজ চিকিৎসকরা ও হেনস্তা হচ্ছে।

 

সম্মানিত আইনজীবিরা আদালতে প্রেস্ক্রিপশনে ঔষধের generic name লিখার জন্য রিট করেন ডাক্তারের প্রতি ঔষধ কোম্পানির নির্ভরতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে।কিন্তু একজন চিকিৎসক একাধিক কোম্পানির ঔষধ থেকে বাছাই করে অপেক্ষাকৃত ভাল কোম্পানির ঔষধ খেতে পরামর্শ দিতেন।তার দায়িত্ববোধ ছিল কারণ তার পরামর্শে বা চিকিৎসায় একজন রোগী সুস্থ বা আরো অবনতি হওয়া চিকিৎসা পদ্ধতির গুণাগুণের সাথে সম্পর্কিত।নতুন নিয়ম ডাক্তার মেনে চললেও নামসর্বস্ব কোম্পানি গুলো তাদের মানহীন ঔষধ গুলো ফার্মেসী দোকানদারদের মাধ্যমে চালিয়ে দিতে পারবে।আইনজীবিরা হয়তো এই দিক টা ভাবেননি যে স্বাস্থ্য সেবার জন্য নতুন এক হুমকি তারা তৈরি করে ফেললেন শুধুমাত্র ডাক্তারদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে।

 

আজকাল ডাক্তারদের প্রতি অনেকেরই অভিযোগ।কসাই উপাধিটা অনেক পুরনোই বলা যায়।ডাক্তারদের জন্য আইন করা হচ্ছে,তাদের চিকিৎসা সেবাও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় মাস্তানদের হেনস্তা উপরন্তু শারীরিক নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে।আইনজীবী ভাইদের কোন রিটের কথা এই নিয়ে শুনিনি।

আইনজীবি ভাইবোনেরা বা দেশের প্রভাবশালী আইনজীবিরা যখন সামান্য দেওয়ানী মামলার জন্য ও যখন মাসের পর মাস ঘুরিয়ে টাকা দাবি করেন আমজনতা দিয়ে দেন বিনা বাক্য ব্যয়ে,আর সেই টাকা দিয়েই অনেক আইনজীবি তার সন্তানদের জন্য শিক্ষক,কোচিং খরচ বহন করেন।সন্তানদের উপদেশ দেন,ভাল করে পড়,তোমাকে ডাক্তার হতে হবে।

________________________________

নাভীম কবির প্রতীক , চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ । সুলেখক। এমবিবিএস শিক্ষার্থী।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়