Ameen Qudir

Published:
2019-01-17 01:37:01 BdST

Khulna Medical Collegeখুলনা মেডিকেলে রোগী আছে , শিক্ষার্থী আছে : নেই ডাক্তার ও শিক্ষক


 

 

সংবাদদাতা
_____________________

বাংলাদেশে অনেক ভাল কাজের দিশারী খুলনা মেডিকেল কলেজ। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির শোরগোল ও ডামাডোল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তাতে বেড়েছিল শিক্ষার মান।
পুরো বিশাল একটি অঞ্চলের মানুষের মাঝে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে খুলনা মেডিকেলে র চিকিৎসকদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। বরং হাজারো সীমাবদ্ধতার মাঝেও দিয়ে যাচ্ছেন উত্তম সেবা।
কিন্তু শত চেষ্টার সেই আগ্রহে জল ঢালছে নানা অভাব । এই মেডিকেলে অভাব আর অভাব। কেবল অভাব নেই সেবা পেতে আগ্রহী রোগীর। অভাব নেই সুশিক্ষা পেতে আগ্রহী মেডিকেল শিক্ষার্থীর।

খুলনা মেডিকেল কলেজে ১৯টি বিষয়ে কোনো অধ্যাপক নেই। ১৬টি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। নয়টি বিষয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন।

২৬ বছর আগে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল খুলনা মেডিকেল কলেজ। এরপর শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষকের নতুন কোনো পদ বাড়ানো হয় নি। বরং বর্তমানে থাকা শিক্ষক পদের প্রায় অর্ধেকই শূন্য। শুরুতে ৫০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ থাকলেও বর্তমানে প্রতিবছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬০। বর্তমানে কলেজে ছয়টি ব্যাচে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৬১।

মেডিকেল সেক্টরে ভাল অধ্যাপক শিক্ষক মানে সে হাসপাতালের লাখো রোগীর পরম ভরসা। দরকারি শিক্ষক নেই মানে রোগী সেবাতেও ভয়ঙ্কর ঘাটতি হচ্ছে।
অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকার কারণে খুলনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছেন না। শিক্ষকসংকটের কারণে ব্যবহারিক, টিউটোরিয়াল ক্লাস ও পরীক্ষা সময়মতো হচ্ছে না। কলেজের ১৯টি বিষয়ে কোনো অধ্যাপক এবং ১৬টি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। নয়টি বিষয়ে মাত্র একজন করে শিক্ষক আছেন।

ফিজিক্যাল মেডিসিন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি, রক্ত পরিসঞ্চালন এবং হেপাটোলজি বিষয়ে একজন করে শিক্ষকও নেই। এসব বিষয়ের জন্য কলেজ থেকে অবসরে যাওয়া শিক্ষকেরা মাঝেমধ্যে এসে পড়াচ্ছেন।

কলেজে মৌলিক বিষয়গুলো হলো অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন ও ফরেনসিক মেডিসিন। এসব বিভাগে শিক্ষকের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৮। শিক্ষক আছেন ৩৮ জন। শূন্যপদ ২০টি। এই আট বিভাগে অধ্যাপকের পদ আছে আটটি। সব কটি বিভাগেই এই পদ শূন্য রয়েছে। আট বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের নয়টি পদের ছয়টিই শূন্য।

মৌলিক ও অন্য সব বিষয় মিলিয়ে মোট ৩২টি বিষয়ে এই কলেজে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের যথাক্রমে ২৩, ৩৫, ৪৩ এবং ৩৬টি পদ আছে। এর মধ্যে অধ্যাপক আছেন মাত্র চারজন, সহযোগী অধ্যাপক আছেন ১৬ জন, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক আছেন যথাক্রমে ৩০ ও ২৬ জন।

কলেজটিতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের ১৯টি করে পদ শূন্য। সহকারী অধ্যাপকের ১৩টি এবং প্রভাষকের ৫টি করে পদ শূন্য রয়েছে।

কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন, ‘অ্যানাটমি বিষয়ের মাধ্যমে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর হাতেখড়ি হয়। কিন্তু কলেজে এ বিষয়ে কোনো অধ্যাপক নেই। মৌলিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো বিষয়েই অধ্যাপক নেই। ফরেনসিক বিষয়ে একজন সহকারী অধ্যাপক আছেন, তিনি মাসখানেক পর অবসরে যাবেন। এখন থেকেই আমাদের দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেছে। অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষকসংকট তীব্র।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকসংকটের কারণে তাঁদের নিয়মিত ক্লাস হয় না। ব্যবহারিক ও টিউটোরিয়ালে তাঁরা বড় সমস্যায় পড়ছেন। অনেক বড় বড় গ্রুপে টিউটোরিয়াল হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুই ব্যাচের ক্লাস একসঙ্গেও হচ্ছে। এতে শেখাটা ঠিকমতো হচ্ছে না।

খুলনা মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চলে মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক ও দুজন প্রভাষক দিয়ে। সহকারী অধ্যাপক যিনি আছেন, তিনিও আগামী মাসে অবসরে যাবেন। । এই বিভাগের শুধু শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে না, আটকা পড়েছে শতাধিক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন।

ওই বিভাগের একমাত্র সহকারী অধ্যাপক আ খ ম শফিউজ্জামান সোমবার ঢাকায় ছিলেন একটি মামলার সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে। ভুক্তভোগী রা বলেন, ‘তাকে সপ্তাহে আটটা পর্যন্ত ক্লাস নিতে হচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যু হলে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি এবং বিভিন্ন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ করতে হয়। শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হাতেখড়িই ঠিকমতো হচ্ছে না।

 

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়