Ameen Qudir

Published:
2018-12-28 04:09:20 BdST

জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট পোস্ট "সিদ্ধান্ত নিয়েছি ময়মনসিংহ মেডিকেলের পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিব"


 

 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ
____________________________


সরকারি হাসপাতালে রোগীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে এটেন্ডেন্টদের বা রোগীর স্বজনদেরও কিছু করনীয় আছে। কারন এখানে হাসপাতালের স্টাফ যেমন ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ড বয়,পরিচছন্ন কর্মীদের সহ বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য সেবার সাথে জড়িত থাকেন।

সেখানে অনেক খারাপ মানুষের (দালাল) দের বিচরন আছে।আছে নানা নিয়ম কানুন যা দায়িত্ব শীল মানুষ হিসেবে আপনাকে পালন করতেই হবে। সেখানে যাওয়া মাত্র আপনি ভর্তি হতে পারবেন না এবং ডাক্তার ও সাথে সাথে এসে আপনাকে চিকিৎসা দেবেনা।
সরকারী হাসপাতালে আসলে দয়া করে কিছু ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি খেয়াল রাখুনঃ
______________________________

১. হাসপাতালে যে অপরিচিত লোকটি আপনার ঘনিষ্ট হিসাবে ডাক্তারকে পরিচয় দিবে, সে লোকটি হয়তো একজন দালাল। শুরুতেই মার্ক করে রাখুন। এড়িয়ে চলুন। তাতে টাকা, সম্মান ও রোগী তিনটাই বাঁচবে।

২. জরুরী বিভাগ থেকে ভর্তির পর কাগজটি নিজ হাতে বহন করে নিজের ওয়ার্ডে যাবার অভ্যাস করুন। অন‍্যথায় ট্রলি বহনকারী লোকটি আপনাকে বড়সড় খরচ করিয়ে শুইয়ে দিতে পারে।

৩. ডিউটি ডাক্তাররা শিক্ষিত ও কোয়ালিফাইড। সেখানে গিয়ে নিজের ক্ষমতা, শিক্ষাগত যোগ্যাতা বা স্মার্টনেসের প্রমান দিতে যাবেন না। আপনি যতটুকু ভদ্রলোক হবেন, তারা তার চাইতে বেশি ভদ্রলোকের মত আপনাকে চিকিৎসা দিবে।

৪. হাসপাতাল থেকে সাপ্লাইকৃত ঔষুধ ডাক্তাররা দিবে না। সংশ্লিষ্ট ঔষুধের জন্য নার্স বা ইনচার্জকে ভদ্র ভাষায় বলুন।

৫. রোগীর পাশ থেকে আপনার সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে ফেলুন। তারা রোগীর কোন কল্যানে আসবে না। তাদের জন্য চিকিৎসা দেরি হয়, এমনকি রোগী মারা যেতে পারে। যত মানুষ কম তত রোগীর সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা বেশি।

৬. সরকারী হাসপাতালে বেড এর জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না। এখানে কেউ বেড দখল করে শুয়ে থাকে না। সবাই অসুস্থ রোগী। সেখানে মুচি ডোম শুয়ে থাকলেও তাকে নামিয়ে আপনাকে উঠানো যাবেনা। বেড না থাকলে একজন ডাক্তারের মা অসুস্থ হয়ে আসলেও তাকে মেঝেতেই থাকতে হবে। সকল রোগী সমান। বেড ও মেঝের সবাইকে সমান চিকিৎসা দেওয়া হয়।

৭. কোন রাজনৈতিক পরিচয় দেবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, ঝামেলা এড়ানোর জন্য সকল ডাক্তার ঐ রোগীর কাছে যেতে অনাগ্রহ বোধ করে। দিন শেষে ক্ষতিটা আপনারই। দলবল নিয়ে হাসপাতালে আসবেন না। এতে ডাক্তারদের কাজের অসুবিধা হয় এবং অন্য রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

৮. রোগী খাবে কি বলে বারবার বিরক্ত করবেন না। যদি স্যালাইন চলে তাহলে ভেবে নিন তাকে আলাদা করে খাওয়াতে হবেনা। খাবার বন্ধ রাখা হয় রোগীর ভালোর জন্যই। কিছুক্ষন না খেলে আপনার রোগী মারা যাবেনা। ডাক্তার বা নার্সের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে খাওয়াবেন না।

৯. ক্যানুলা খুলে গেছে, স্যালাইন অফ কেন, ঔষুধ কখন খাবে, কিভাবে খাবে, ঔষুধটা চেক করে দিন তো.... এই প্রশ্নগুলো নার্সকে ভদ্রভাষায় জিজ্ঞাসা করুন। সাধারণতঃ এগুলো তাদের দায়িত্ব। তারা শিক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তাদের সম্মান করুন। এগুলো ডাক্তারের কাজ নয়।

১০. যেকোন পুরুষ ডাক্তারকে ডক্টর বা 'স্যার' ও মহিলা ডাক্তারকে ডক্টর বা'ম্যাম/ম্যাডাম' বলে সম্বোধন করুন। একইভাবে মহিলা ও পুরুষ নার্সকে সিস্টার-ব্রাদার বলুন। আয়া বা কর্মচারীদের মামা ও খালা হিসাবে সম্বোধন করবেন। এগুলো আপনাকে ছোট করবে না বরং সম্মানীয় বানাবে। ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরাও আপনাকে আন্তরিকতার সাথে সাহায্য করবে।

১১. যেখানে সেখানে কফ-থুথু বা পানের পিক ফেলবেন না। আপনি হাসপাতাল যতটুকু নোংরা করবেন, বাকী সবাই আপনার ফেলানো থুথু দেখে সেখানে থুথু ফেলে ভাসিয়ে দিবে অপরাধের শুরুটা কিন্তু আপনিই করলেন।

১২. হাসপাতালের ডাক্তারদের উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি শুধুই লাভবান হবেন। কারণ সেবার বিনিমিয়ে ডাক্তাররা এক পয়সাও পকেটে ঢুকাবে না।

১৩. রোগী মারা গেলে ডাক্তারকে গালিগালাজ না করে স্ব-স্ব ধর্মের সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন। ডাক্তার একজন মানুষ। তিনি চেষ্টা করেছেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আপনার রোগীর আয়ুষ্কাল বেঁধে দিয়েছন।

আমাকে বিভিন্ন অভিযোগ যেমন ট্রলি ম্যান,আয়া টাকা নেয়, গেইট ম্যান টাকা নেয়,ডাক্তার,সিস্টার এর ব্যবহার খারাপ।ফিরে তাকান তিন বছর আগে। কত টাকার ঔষধ কিনতেন আার ইনভেস্টিগেশানে খরচ করতেন। একটু সহনশীল হউন।মনে রাখবেন এ হাসপাতালের কর্মকর্তা,কর্মচারীরা এবং পেশাজীবী নেতারা,ক্লিনিক মালিক,প্যাথোলজি ল্যাব মালিক মেডিকেল কলেজ প্রশাসন আমাকে শত্রু মনে করে বিভিন্ন ভাবে বিপদে ফেলার চেস্টা করে।কারন তাদের ব্যবসা ও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে না পারায় ক্ষতি হচ্ছে। আমার কিছু হলে আমার পরিবার এতীম হবে।

অনেক নেতা,ডাক্তার নেতা,ছাত্রনেতা সবাই পরিচালক হতে চায়।একটা গোস্টি প্রতিনিয়ত হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট করতে নীতিহীন ভাবে চেস্টা করছে ভিতরে ও বাইরে।আমি একা মানুষ। এ শহরে আমার কোন আত্মীয় নেই।নিজের সন্মান বিসর্জন দেয়া যায়, বেয়াদবী সহ্য করা যায় না।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অব্যবহিত নিব।
সাধারন জনগণ আপনারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।আপনাদের কাছে আমি ঋনী।
আমার চাকুরী কালীন সময়ে আমার যে কোন ভুলক্রটির জন্য আপনাদের সকলের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী।

_____________________________

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদ
সুলেখক। পরিচালক, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়