Ameen Qudir

Published:
2018-10-19 22:08:39 BdST

লাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের মহারাজ আইয়ুব বাচ্চুর মহাপ্রয়ানে ডাক্তার লেখকদের স্মৃতিশ্রদ্ধার্ঘ্য -২ এই রুপালী গীটার ছেড়ে


 

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান
_______________________________

আমি তার চেয়ে বয়সে প্রায় ছ’বছর ছোট। তবুও আমাকে ‘আতিক ভাই’ বলে ডাকতেন।

আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একজন অসাধারন গুনী শিল্পী। তার চেয়েও বড় ছিলো তার বদান্যতা।

আমার সাথে তার প্রথম পরিচয় ১৯৮৬ সালে। আমি তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র। আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সে সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোলস’ গান পরিবেশন করতে এলো। তখন থেকেই পরিচয়।

আমি তাকে বলতাম গিটারের যাদুকর। অসামান্য গুনের এ মানুষটি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক আর গীটারিষ্ট।

১৯৯০ সালে সোলস থেকে সরে ‘এল আর বি’ নামে নতুন ব্যান্ড করলেন। চট্টগ্রামে তাদের প্রথম কনসার্ট হলো আমাদের মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে।

আমাদের প্রজন্মের সীমা ছাড়িয়ে তিনি মোহিত করেছেন নতুন প্রজন্মকে। ১৯৯৩ তে ‘এল আর বি’র প্রথম এলবামের গানগুলো এখনো মনে পড়ে । দ্বৈত এলবামে ছিল ‘ঘুম ভাংগা শহরে’, ‘মাধবি’, ‘হকার’, ‘ঢাকার সন্ধ্যা’,। এখনো গাই শেষ চিঠি কেমন অমন চিঠি হয়।এর পর ‘সুখ’এ তিনি মিলন ঘটিয়েছিলেন ব্লুজ, রক আর তার স্বকীয়তাকে। ‘চলো বদলে যাই’, সুখ, গতকাল রাতে, সেই তুমি, রুপালী গিটার সহ সব গানগুলো ছিলো আমাদের হৃদয় জুড়ে।

সংগীতের বোদ্ধা না হয়েও আমরা বুঝেছি কিভাবে নিজস্ব গায়কীর সাথে তিনি জুড়ে দিতেন তার লব্দ্ধ গবেষনার ফসল।

অনেক বার দেখা হয়েছে দক্ষিন আমেরিকাতে। অরল্যান্ডে এসেছিলেন ক’বার। তার নামের আর খ্যাতির ব্যাপ্তি বাড়লেও এ অধমের নামটা মনে রাখতেন। বারবার বলেছি ‘ভাইটা’ বাদ দিন বাচ্চু ভাই। তিনি কেবল হাসতেন।

একবার তিনি এবং কুমার বিশ্বজিত এলেন একসাথে। কনসার্ট শেষে বললেন ‘হাউস অফ ব্লুতে’ যাবেন। ব্লুজ শুনতে শুনতে আবেগপ্রবন হয়ে গেলেন তিনি। ব্লুজের ইতিহাস বললেন গড়গড় করে। সংগীত ছিলো তার জীবন। গীটার ছিলো তার জীবন।

২০১৫ তে তার ‘জীবনের গল্প’ শুনতে শুনতে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। জীবনবোধ আর রোমান্টিকতা তার গানগুলোকে জনপ্রিয় করেছে।

চল বদলে যাই থেকে অনিমেষ, ময়না থেকে তিন পুরুষ কেবল ভরিয়ে দেয় আমার মন। দেশের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা ঘুরে ফিরে এসেছে তার গানে।তার গাওয়া বাংলাদেশ কেবল তার একটি।

বেদনার বহু রঙ দেখেছি তার গানে। বিরহের বঁহু সুর সিক্ত করেছে আমাদের হৃদয়।তারা ভরা রাত থেকে হাসতে দেখে গাইতে দেখো তার কেবল কয়েকটি।

এত বড় মাপের একজন শিল্পী এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।তার জীবনটা গল্পটা অনেকটা তার অচেনা জীবনের গানের মতো হয়ে গেলো। নিজেকে কি খুব অবহেলা করলেন তিনি? খানিকটা বোহেমিয়ান ছিলেন তিনি। অনেক গানে তা জেগে উঠেছে।

অরল্যান্ডোর শরতের দিনগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে।
কাজ শেষে বাড়িতে ফিরছি।সেই প্রিয় গানটি শুনছি ....
‘এই রুপালী গীটার ছেড়ে, একদিন চলে যাবো দুরে ... বহু দুরে...’

চোখ জল ভরে আসছে। গলাটা ধরে আসছে।

আগে কিন্তু এমন কিছু হয়নি।

আজ রাতে আকাশের একটি তারা হয়ে যাবেন আইয়ুব বাচ্চু।
আধার রাতে মিটি মিটি করে জ্বলবেন।সেই তারা ভরা রাতে হয়তো গাইবেন, ‘মানুষ বড়ো একা’।

_____________________________

 

বি এম আতিকুজ্জামান। সুলেখক। প্রবাসী প্রথিতযশ চিকিৎসক

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়