Ameen Qudir

Published:
2018-09-04 17:51:44 BdST

হাসপাতালের জার্নালকাজ করেও বেতন পান না হাজার হাজার চিকিৎসক: এটা অনেক মন্ত্রীই জানেন না


 



ডাঃ রাজীব দে সরকার
____________________________


হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের মানুষের হাতেই এদেশের মাটিতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। যে কাজ পাকিস্তানী দোসর বাহিনী করার সাহস পায় নি, সেই ধৃষ্টতা দেখিয়ে নিজেদেরকে আমরাই অকৃতজ্ঞের জাতিতে পরিণত করেছি।

সুতরাং এই দেশে ভালো কাজের মূল্যায়ন হবে না - এটা ভেবে নিয়েই সকল কাজে হাত দেওয়া উচিৎ। বিশেষতঃ চিকিৎসক সম্প্রদায় এ বিষয়ের ভুক্তভোগী তো বটেই।

ঈশপের একটা গল্প বলিঃ
অন্ধদের ঘ্রাণ আর স্পর্শ শক্তি প্রবল হয় এটা মনে করা হতো। তো একবার এক অন্ধের কাছে এক লোক একটা বাচ্চা হায়না নিয়ে এলো। উদ্দেশ্য অন্ধ মানুষটা ঐ প্রাণীটাকে চিনতে পারে কী না সেটা দেখা। অন্ধ মানুষটা একবার হায়নার গায়ে হাত বোলায়, একবার পায়ে হাত বোলায়, মাথায় হাত বোলায় - এভাবে চললো বেশ কিছুক্ষণ। একটু পরে বাচ্চা হায়নাটাকে যে এনেছিলো তার কাছে ফেরত দিয়ে অন্ধ মানুষটি বললো, "আমি জানি না, তুমি কী এনেছো, আমি বলতে পারছি না এটা কোন প্রাণী, তবে এতো টুকু তো স্পষ্ট যে ওকে যদি খোলা ছেড়ে দাও, একদিন তোমার ভেড়ার পালের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।"

এই গল্পের সাথে আমার কথার কোন মিল নেই। কেউ মিল খুজঁতে যাবেন না। গেলে খুউউউউব কষ্ট পাবো। এমনিই বললাম গল্পটা। আসলে বউ গেছে বাপের বাড়ি, গল্প করার কেউ নেই তো তাই এট্টু গল্প করলাম আর কি...

এদেশে এক বিশেষ চিকিৎসক দল আছেন যারা দিনের পর দিন দেশের প্রায় সকল সরকারী মেডিকেল কলেজ গুলোতে কাজ করে যাচ্ছেন। রোগী দেখছেন, রাউন্ড দিচ্ছেন, ড্রেসিং করছেন, ওটি করছেন, সর্বোপরি চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত যতো কার্যক্রম সম্ভব সবই তারা করছেন।

তারা ভূয়া ডাক্তারও নন। এমবিবিএস সার্টিফিকেট কিংবা বিএমডিসি এর রেজিস্ট্রেশনটাও অরিজিনাল। কিন্তু তাদের কোন বেতন নাই।

তারা কারো কাছ থেকে কোন বেতন নেন না। কোন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের এই ফ্রী সার্ভিস এর জন্য তাদেরকে একটি পয়াসাও দেন না। অথচ তারা কাজ করে যাচ্ছেন। মাসের পর মাস, মাসে মাত্র ৩০ দিন, সপ্তাহে মাত্র ৭ দিন এবং সকাল-বিকাল-রাত যেমনটা প্রয়োজন তেমনটাই। এক অমানবিক অনিয়মের ছকে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন তারা।

ওরা আমাদের অনারারী চিকিৎসক, #অনারারী_মেডিকেল_অফিসার।

টাকা তো তারা নেনই না, বরং আমাদের প্রিয় বিএসএমএমইউ কে উলটো এদের টাকা দিতে হয়। দারুন না ব্যাপারটা? আমি বাড়ির ভাত খেয়ে এসে আপনার জন্য আজ করবো, আবার উলটো আপনাকে টাকা দেবো।

কোথাও পাবেন এমন সেবা? এমন নাটক? এমন প্রহসন?
অথচ বাংলাদেশের সদ্য এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকদের সাথে এই মজাটা করা হয়। বছরের পর বছর ধরে করা হচ্ছে।

এবার ভাবুন তবে, বাংলাদেশ আজকের তারিখ পর্যন্ত কতো হাজার চিকিৎসক কাজ করে গেছেন আমাদের হাসপাতাল গুলোতে অথচ কোন টাকা নেন নি। বেতন নেন নি। ভাতা নেন নি। সুবিধা নেন নি। বিনিময়ে পেয়েছেন কেবল একটি সার্টিফিকেট।

বাংলাদেশে আমরা চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। এদেশে মানুষ নারী চিকিৎসকদের গায়ে হাত তোলার ব্যাপারে কোন লিঙ্গ বৈষম্য করে না। এটাকে অন্তঃত আপনি চিকিৎসক লাঞ্ছনার ধনাত্নক দিক হিসেবে ধরতে পারেন। নারী-পুরুষ, ডাক্তার পিটানোর সময় সবই সমান বীর বাঙালীর কাছে। ব্রাভো!!

আমরা আবার ভুলে যেতে ভালোবাসি খুউব। যে ছেলেটা বা মেয়েটা চাকুরী পাবার পরে গ্রামে ৪ বছরের বাধ্যতামূলক সার্ভিস দেবে, তার আগের জীবনে সে রাষ্ট্রকে কতো লক্ষ টাকার সার্ভিস বিনামূল্যে দিয়ে এলো, সে হিসেব আমরা কেউ রাখি না কেন?

সার্টিফিকেটটা লাগবে আমাদের ডিগ্রীর জন্য। আবার ডিগ্রী ছাড়া পদোন্নতি হবে না। আবার ডিগ্রী হলেও পদোন্নতির কোন গ্যারান্টি নেই। আমলা বাবুরা চাইলে, তবেই রাঁধা নাচবে। ঘি এর ব্যাপারটা তো থাকছেই।

অতি সম্প্রতি একটি বিসিএস ব্যাচের চিকিৎসক কর্মকর্তাদের পদায়ন নীতিমালা দেখে মনে হয়েছে এদেশে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চাকুরী করতে আসা একটি ফৌজদারী অপরাধ। ২০০ বছর আমাদের আটকে রেখে গেছেন ব্রিটিশ বাবুরা, আর নতুন বাবুরা আটকে রাখবেন আরো ৪ বছর।

আপত্তি ছিলো না, যদি বাবুরা একবার সশরীরে ঘুরে আসতেন আমাদের গ্রামের হাসপাতাল ক্যাম্পাসগুলো। বাবুদের ছেলেমেয়েরা হয় বিদেশ কিংবা স্বদেশের ৫ তারকা ভার্সিটিতে পড়েন বলে সেই চাপ তারা আর নিলেন না। আর অকৃতজ্ঞ জনগণকে ভোটের আগে খুশি রাখতে কুরবানী দেবার জন্য চিকিৎসকদের থেকে প্রিয় দুম্বা আর হয়তো তারা পান নি।

বাংলাদেশের যে কোন সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য নিজেদের কোরবানী করে দেওয়া একদল অনারারী চিকিৎসক পাবেন। এদের কথা কোন মন্ত্রী বলবেন না, এদের পরিশ্রমের গল্পটা কোথাও ছাপা হবে না।

এদের এই বেতনবিহীন অক্লান্ত পরিশ্রমের ইতিহাসটা শুধু হাসপাতালগুলোর ইট-কাঠ-পাথরে লেখা থাকবে।

জয়তু বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ।

________________________________

ডাঃ রাজীব দে সরকার
রেজিস্ট্রার, সার্জারী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক, বিএমএ, রাজবাড়ী
আহবায়ক, সুহৃদ সমাবেশ, গোয়ালন্দ।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়