Ameen Qudir

Published:
2018-07-21 17:51:35 BdST

'নেতা হওয়ায় ডিউটি করতে হয় না,সিনিয়ররা তাকে সমীহ করে চলে, এই নিয়ে সে বেশ গর্বিত'


 


ডা.মিথিলা ফেরদৌস
_______________________________

ছেলেটা বসেছে এক সিনিয়রের চেয়ারের নীচের হ্যান্ডেলের পা দিয়ে,আরেক চেয়ারে।যার হ্যান্ডেলে পা দিয়েছে সে তার সিনিয়র এবং অপরিচিত।খুব ভাল করে খেয়াল করলাম,ছেলেটা যাদের সাথে কথা বলছে তারা তার বন্ধু।কথা হচ্ছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের কমিটি নিয়ে।

বুঝলাম নেতা মানুষ, সিনিয়রের চেয়ারে কেন,ঘাড়েও পা নাচিয়ে কথা বলতেই পারে।কিন্তু কথায় বুঝলাম,তার ডিউটি করতে হয় না,সিনিয়ররা তাকে সমীহ করে চলে এই নিয়ে সে বেশ গর্বিত।মনে মনে হাসলাম।ট্রেনিং টা এমন এক জিনিস,যাতে ফাঁকি দিলে অন্য কারো লস নাই,লস নিজেরই।জীবনে করে খেতে হবে তো।পদে পদে বিপদে পরতে হবে।হয়তোবা এখন বিপদ হয় না,কে জানে!!

নেতা আমিও কম দেখিনি,নিজের মেডিকেল সহ মোটামুটি বিভিন্ন মেডিকেলের অনেক বড় বড় নেতাই আমার পরিচিত।তারা দেখলেই সালাম দিবে(জুনিয়ররা), হাসবে,কুশল বিনিময় করবে,বিনয়ী হওয়াটাই যেখানে একজন নেতার সবচেয়ে বড় গুন হওয়া উচিৎ তা তারা মেনেই চলে।আমার জন্যে ডিজি অফিসে নিজের প্রাকটিস ফেলেও দৌড় দিয়েছে আমার মেডিকেলের ছোট ভাইটি।কেমনে আমি বলবো নেতা হলেই খারাপ!!

তবে মনে হয় যুগটাই খারাপ।যখন দেখি কিছু মেয়েদের আচরন ও অবাক করা।একদিন খেতে বসে দেখলাম এক মেয়ে দিব্যি আমার পায়ের উপর পা রেখে কথা বলতেছে,নিজে থেকেই সরে অন্যখানে বসি।একই মেয়েকে আরেকদিন দেখলাম,আমার জন্যে আনা চা আমি হাত বাড়ানোর আগেই হাতে নিয়ে নিলো,সার্ভ করা ছেলেটাও বিরক্ত।অনেক জুনিয়র।কিছু বলিনা।নীরবে সয়ে যেতে হয়।যুগটাই হয়তো খারাপ।

একদিন এক জুনিয়র মেয়ের সাথে কথা হচ্ছিলো,বাবা ছিলেন নামকরা ডাক্তার,শুধু তাই না একটা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল। বলল,"আপু জানেন আমার বাবার এত টাকা ছিলো,তবুও আমার মা সামান্য এক কালার পেন চাওয়ার জন্যে মেরেছিল।কিছু বলার সাহস ছিলো না আমাদের।এখনও টিচাররা কিছু বললেই, ভয়ে হাত পা কাপে। অথচ এখনকার জুনিয়রদের সাথে কথাই বলা যায়না"।সেই মেয়ের সব ভাইবোন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।পারিবারিক শিক্ষা এমন এক জিনিস চাইলেও বেয়াদবি করা যায় না,সে প্রসিডেন্টের ছেলেই হোক না কেন?

ইদানিং প্রায়ই সি এ, আই এম ও দের কম্পলেইন,ইন্টার্নিরা কথা তো শুনেই না উলটা কথা শুনায়,"নিজের কাজ নিজে করেন।"এমন টাইপ কথাও নাকি সিনিয়রদের বলে!আমি সবার কথা শুনি আর অবাক হই।এমন করে কাউকে বলার কথা আমরা কখনওই কল্পনাও করতাম না।

কেন তাহলে এমন হচ্ছে?
"শিশুকে হ্যা বলুন"।এই কথার সাথে আমি কখনওই একমত নই।কারণ আমাদের বাবা মায়ের কাছে কদাচিৎ হ্যা শুনতে হয়েছে,তাতে কি আমরা মানুষ হইনি?!!হ্যা বলতে বলতে শিশু দিন দিন লাগামের বাইরে চলে যায়।এখন সবার ঘরেই একটা দুইটা বাচ্চা।কেউই না বলেনা।এমন কি আমরাও বলিনা,যখন যা চায় তাই এনে দিই।এইজন্যেই ভয় হয়,কয়দিন পর এই ছেলেকেই কেউ বাবা মা তুলে গালি দিবে না তো?

তবে একটা ব্যাপারে আমরা খুবই কঠিন,তা হলো অন্যের সাথে আচরণ। আমার ছেলে এখনই বুঝে গেছে কোন মানুষ ই ছোট না।সে রাস্তায় যেকোন ফেরিওয়ালা রিক্সাওয়ালা সবাইকেই মামা,চাচা বলে সুন্দর করে কথা বলার চেষ্টা করে,সবাইকেই সালাম দেয়,মাঝে মাঝে অবশ্য ভুলেও যায়, বাচ্চামানুষ।তখন আমরা মনে করে দিই।বার বার বলে দেয়া হয়েছে,কারো নামেই কথা বলা যাবেনা,সে যত খারাপই হোক।আমরা এইসব ব্যাপারে আমাদের চুড়ান্ত করার চেষ্টা করি,বাকিটা উপরওয়ালার ইচ্ছা।পড়াশুনার উদাসীনতা নিয়ে কথা বললেও,টিচাররা আমার ছেলের আদব কায়দা বা অন্য বাচ্চাদের সাথে আচরণ নিয়ে সবসময়ই প্রশংসা করে।এইটুকু আপাতত পাওয়া।ভবিষ্যৎ কি হবে জানিনা।

সরকারী চাকরী হওয়ার আগে একটা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের টিচার ছিলাম,বড় চারটা সরকারী মেডিকেল কলেজে চাকরী করেছি,যার তিনটাতেই ক্লাস নিতে হয়েছে।আমার অনেক স্টুডেন্টস এখনও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের টিচার।এদের কেউ কেউ দেখা হলে সালাম দেয়,অনেককে চিনতেও পারিনা,নিজেরাই পরিচয় দেয়,কেউ দেখা হলে এড়িয়ে চলে, যার যেমন শিক্ষা।কিন্তু এই যে আমার স্টুডেন্টদের স্টুডেন্ট,মানে গ্রান্ড স্টুডেন্টদের কেউ কেউ ইনবক্সে নক দেয়,জানতে চায়,আমি কোন ইয়ারে পড়ি,কমেন্টে মস্করা করে,জ্ঞানদান করে,তখন খুব অসহায় লাগে,এ কোন যুগে বাস করছি আমরা!!আবার অনেককে দেখলে আশাবাদী ও হই,তাদের বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা চলে আসে নিজের অজান্তেই,নাহ সবাই পচে যায় নাই,তাছাড়া কিছু কীটপতঙ্গ তো থাকবেই।না হলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাতো।
______________________________
©মিথিলা ফেরদৌস । সুলেখক। পেশায় লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়