Ameen Qudir

Published:
2018-04-11 15:07:57 BdST

স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সমূহের সীমাবদ্ধতা: কতোটুকু জানে জনগণ?


শহীদ সোহরা ওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. পিকে সাহার নেতৃত্বাধীন দক্ষ টিমের ছবি। লেখকের সৌজন্যে পাওয়া।


ডা রাজীব দে সরকার
_________________________________

সেবাগ্রহীতার প্রত্যাশাকে সম্মান দেওয়া যেকোন সরকারী কর্মচারীর ঐকান্তিক দায়িত্ব বলে আমার বিশ্বাস।

চিকিৎসা - রোগ - হাসপাতাল বিষয়গুলো আক্ষরিক অর্থের চেয়েও বেশী সংবেদনশীল।

আমি কিংবা আমার কাছের কেউ যখন রোগী, তখন আমার কিছু প্রত্যাশা থাকবে। রোগী হিসেবে কোন হাসপাতালে কোন সুবিধা আছে আর কোন সুবিধা নেই, এটা আমি দেখতে যাবো না। এটা দেখবেন সরকার, এটা দেখবেন রাষ্ট্র।

আমি শুধু সেবা পেতে চাই, নিঃশর্তে, অবিলম্বে, সহজে।

বোধ করি এই ধারণা থেকেই রোগী কিংবা তার স্বজনদের সাথে হাসপাতাল এর দূরত্ব তৈরী হয়।

একটি নিম্নমধ্যবিত্ত দেশ হিসেবে আমাদের সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকারের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা এখনো হয় নি।

এতো সীমাবদ্ধতার পরেও স্বাস্থ্যখাতে প্রশংসনীয় পরিবর্তন এসেছে। রাষ্ট্রের লক্ষ্য এখন "সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা"। এবং এই ব্যবস্থা বলবৎ করতে সরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েছে। অচিরে হয়তো ৫০ বেডের উপজেলা হাসপাতালগুলো ১০০ বেড এ উন্নীত করা হবে। কোন সুবিধাই আর অলব্ধ থাকবে না। এমডিজিতে স্বাস্থ্য খাতের জয়জয়কার এর পরে হাতে চলে এসেছে নতুন এসডিজি।

ট্রানজিশন একটা পিরিয়ডে ঢুকে গেছি আমরা।

আমার নিজের এলাকা গোয়ালন্দ উপজেলা। নদীর তীরবর্তী উপজেলা। দরিদ্র একটি জনপদ। গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালে প্রথম থেকেই তীব্র চিকিৎসক সংকট ছিলো। এখনো আছে।

আবার চিকিৎসকেরা যতোই চেষ্টা করেন না কেন প্রযুক্তিগত ও বিশেষায়িত সেবা এখানে অপ্রতুল।

মধ্যরাতে গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালে কোন হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী এলে শুধু রোগীর স্বজনেরাই নয়, অসহায় হয়ে পড়েন চিকিৎসক নিজেও। এ কথা বলছি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে।

তাই বলে গোয়ালন্দ উপজেলায় কেউ কী হৃদরোগে আক্রান্ত হন না? তাদের কী এইটুকু বিশেষায়িত সেবা পাবার উপায় নেই?

আমি নিজে যদি রোগী হতাম, আমি চাইতাম আমার সকল প্রকার চিকিৎসা গোয়ালন্দ উপজেলা হাসপাতালেই হবে। আমি কোথাও রেফার্ড হবো না। ক্যাথল্যাব - অ্যাঞ্জিওগ্রাম - মেজর সার্জারী সব আমার এলাকার হাসপাতালেই হতে হবে। কীভাবে হবে রাষ্ট্র জানবে।

রোগীরাও হয়তো এমনই চান। তাই তাদের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা কিংবা ক্ষোভকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনি চিকিৎসককেই প্রশ্ন করে বসেন, "এই হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না কেন? কেন রেফার করতে হবে? তাহলে আপনাদের আর কাজ কী?" তার প্রশ্ন অমূলক কী?

মূলতঃ হেলথ সিস্টেম এর ফ্রন্টে থাকেন চিকিৎসক। তাই সবার ভুল তার ভুল। সীমাবদ্ধতা রাষ্ট্রের অথচ দোষ তার।
তাই কিছু করণীয় আছেঃ

- এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিৎ তাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা ও যথার্থ কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করা।

- স্থানীয় মিডিয়া ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা।

- দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

- চিকিৎসককে তার অধীনস্ত সকল স্তরের সেবাদানকারীকে কাউন্সেলিং করা শেখাবেন। এটা তার দায়িত্ব বলেই আমার মনে হয়। এ ব্যাপারে একজন চিকিৎসক এর চেয়ে ভালো শিক্ষক পাওয়া মাঠ পর্যায়ে দুষ্কর।

- চিকিৎসকদের জনসংযোগ বাড়াতে হবে।

আমি বিশ্বাস করি না যে সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্যখাতের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন।

কারন আমাদের স্বাস্থ্যখাতের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা নিজেদের দক্ষতা আর অতিপরিশ্রম দিয়ে তা আড়াল করে রেখেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

অতিপরিশ্রম তো বটেই।
বিদেশে চিকিৎসকদের কর্মঘন্টা আছে, রোগী সংখ্যার লিমিট আছে। আমাদের দেশে এ সব 'রূপকথা'র মতো শোনায়।

এরপরো আমরা আমাদের 'হেলথ সিস্টেম' নিয়ে গর্ব করি।
কারন আমাদের গর্ব করা সাজে।
কারন পরিসংখ্যান...
কারন ফেলে আসা সংক্রামক রোগ আর মহামারীর যুগ।

জয়তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিভাগ।
______________________________

ডা রাজীব দে সরকার
রেজিস্ট্রার, সার্জারী বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
অনলাইন সদস্য, সিএসসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ইমেইলঃ [email protected]

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়