Ameen Qudir

Published:
2018-04-07 18:25:44 BdST

১১ টার গেরো খুলতে লেগেছিল সাড়ে ৬ বছর,পরীক্ষায় বসেছি ২০ বার:সাপ্লি ৯ বার


 

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন

______________________________

আমার মেডিকেলের প্রফেশনাল পরীক্ষার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ।

১১ টা সাবজেক্টে পরীক্ষা হয় ৩ দফায়,সময়কাল সাড়ে ৫ বছর।তো আমি এই ১১ টা সাবজেক্টের পাশের গেরো খুলতে সময় নিয়েছিলাম সাড়ে ৬ বছর,পরীক্ষায় বসতে হয়েছিলো সবমিলে ২০ বার।মানে আমার মোট সাপ্লিমেন্টারী ছিলো ৯ বার।তার মাঝে প্যাথলজিতেই ছিলো ৩ বার,চতুর্থবার পাশ করে কুলিং পিরিয়ডের ফাড়া কাটিয়েছি। ।

যা ই হোক,আমার নিজের দোষে সাপ্লিমেন্টারী খেয়েছিলাম ৩ বার,এনাটমি,মেডিসিন আর সার্জারি তে।তাহলে বাকি ৭ বার কি হলো?
আসেন,বাকি সাতের কাহিনী শুনি।

বাকি সাতের ৪ টা প্যাথলজি আর ৩ টা মাইক্রোবায়োলজি।২ বছরের ইতিহাসের গল্প বলতে গেলে অনেক সময় চলে যাবে,সংক্ষেপে গল্পটা হলো এই যে আমি আমাদের প্যাথলজি আর ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের একজন ম্যডাম আর স্যারের সুনজরে পড়ে গেলাম,যারা পরষ্পর জায়া ও পতি-দম্পতি।তাদের সেই সুনজর কাটাতে আমার এই দুইটা বছর পার হয়ে যায়।ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট থেকে স্যার চলে যাওয়ায় একবারেই পাশ করে যাই।কিন্তু সমস্যা রয়ে যায় প্যাথলজি আর তার পাশের ডিপার্টমেন্ট মাইক্রোবায়োলজি তে।নিজের ডিপার্টমেন্টে তো আমার ১২ টা বাজাতেনই তিনি,পাশের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টেও চলতো আমার বিষোদগার।প্রথমবার পরীক্ষা দিলাম,ভালোই হলো।অন্তত বুঝতে পারছিলাম পাশ হয়ে যাবে।কিসের কি?ফলাফল ফেল।এর পর ৬ মাস পর আবার,ফলাফল সেই একই।এইবার মনে ভয় ঢুকে গেলো।ভয় না,আতঙ্ক।পরেরবার পরীক্ষার সময় আমি ছিলাম একজন বিদ্ধস্ত মানুষ,যেন পরীক্ষা দেবার জন্যে শুধু দিচ্ছি।যতোবার ম্যাডামের চেহারা দেখতাম,বুঝে যেতাম এবারো আমার পাশ হচ্ছে না।তিনি ডিপার্টমেন্টাল হেডের প্রিয় পাত্রী,তার কথা ডিপার্টমেন্টাল হেড ফেলবেন কেন?তিনি সত্যি মিথ্যা যা বলতেন,ডিপার্টমেন্টাল হেড তা ই বিশ্বাস করতেন সরল মনে।
যা ই হোক,সৌভাগ্যবান ছিলাম,ম্যাডাম অবশেষে বিদায় নিলেন।আলহামদুলিল্লাহ,সেইবারেই পাশ।

আমার জীবনের এই দুইটা বছরের অমানুষিক আতঙ্কের দায় কে নিয়েছিলো?আমার ভেতরের আত্মবিশ্বাসী মানুষটাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবার পেছনের কারণ কি ছিলো?
কেউ এর দায়ভার নেয়নি।আমাকেই বারংবার শুনতে হয়েছে নিশ্চয়ই তুমি পারো না কিছু,নইলে সবাই পাশ করে তুমি করো না কেন?বাসায় মুখ দেখানো অসম্ভব হয়ে দাড়াচ্ছিলো,জুনিয়র ছেলেদের সাথে ক্লাস করা যে কতোটা মানসিক যন্ত্রণার,সাথে তাদের অনেকেরই পাশ করে যাওয়া আর ফেলের লিস্টে নিজের নাম দেখা-এ যে কি অভিশপ্ত পরিস্থিতি,সেটা যার সাথে হয় শুধু সে ই জানে।আর এই পরিস্থিতিতে কাউকে যদি বছরের পর বছর যেতে হয়,তার কি আত্মহত্যার কথা ভাবা খুব বেশি অমূলক?

হু,অবশ্যই অমূলক।আত্মহত্যা করা কখনোই সমাধান না।আমি আত্মহত্যা করাকে কখনো সমর্থন করি না,কোন যুক্তিতেই না।পাশ হচ্ছে না,লেগে থাকতে হবে চিনে জোকের মতো।যার রোষানলে পড়ে বারবার ফেল হচ্ছে,তার পিছনে পিছনে ঘুরে তাকে অতিষ্ঠ করে ফেলেন।তেলাইতে পারেন না?দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে থেকে শেখেন।তবুও কেউ প্লিজ নিজেকে শেষ করবেন না।আপনি নিজে তো মরবেনই,সাথে মেরে রেখে যাবেন আপনার পুরো পরিবার আর প্রিয়জনদের।আর যদি একান্তই না পাড়েন,ভাই ছেড়ে দেন।সবাইকে ডাক্তার হইতেই হবে এমন কোন কথা নাই।আমার অনেক ব্যাচমেট ডাক্তারি পড়া মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোন পেশায় আছেন,এবং বলতে দ্বিধা নেই,তারা আমার চেয়ে অনেকেই এখন ভালো আছেন।

আর প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ,আপনারা চাইলেই ফেল করাতে পারেন,সেটা সবাই জানে।কারণ আপনি যখন এই পথের শেষ প্রান্তে পৌছে গেছেন,আপনার সামনে বসা ছেলে মেয়েগুলো মাত্র সেই পথে যাত্রা শুরু করবে।আপনাদের জ্ঞানের সীমার কাছে তারা তো শিশুই।শিক্ষকতা মহান পেশা,অনেকটা বিচারকের আসনে বসার মতো।এখানে প্রত্যেককেই ন্যায় বিচারের বিধান করতে হয়,এখানে স্বজনপ্রীতি কিংবা ব্যক্তিগত আক্রোশের কোন স্থান নেই।
প্রতিটা ছাত্র ছাত্রীই আপনাদের বাবা কিংবা মায়ের আসনে বসিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করে।খুব কি দরকার সেই অসম্ভব সম্মান আর ভালোবাসার অবস্থানটা স্বেচ্ছাচারী কিংবা অন্যায় আচরণ দিয়ে নষ্ট করে ফেলার!
_________________________________

ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন, ঢাকা। সাবেক শিক্ষার্থী ; শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ,০২ ব্যাচ।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়