Ameen Qudir

Published:
2018-02-23 16:36:45 BdST

উক্ত শিক্ষক  নাকি ক্লাসে "ফাকিং' শব্দ উচ্চারন করেন: এটা তার স্টাইল: বাহ্, কী অধঃপতন!




 

ডা.ছাবিকুন নাহার

_______________________________

আমি ও আমার মন খারাপেরা------------

কিছুদিন যাবৎ মনটা খারাপ। শুধু খারাপ না, ভয়াবহ খারাপ। এমনিতে মন খারাপের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার পাবলিক আমি না, কিন্তু এই এই ব্যাপারটা আমার গলায় বেয়াড়া এক কাঁটার মতো বসে আছে। চুপচাপ। সমস্যা হচ্ছে যেই না ঢোক গিলি, ওমনি কচ করে ওঠে। ভয়ে ঢোক গিলতে ও পারছি না। ঢোক না গিলে আর কাহাতক থাকা যায়, বলেন? তাই ভাবলাম একটু শেয়ার করি আপনাদের সাথে। কথায় বলে, ভাগ করলে নাকি সুখ বাড়ে আর দুঃখ কমে?

মূল বিতং এ যাওয়ার আগে, আসেন একটা দৃশ্য দেখে আসি।

'একটু দেখে চলতে পারেন না?'
যেতে যেতে বেমাক্কা এক ধাক্কা সামলিয়ে উপরোক্ত কথাটা বলল এক মেয়ে।

'নন সেন্স চিনস আমি কে?'

'আরেহ! স্যারি না বলে উল্টা ধমক দিচ্ছেন যে! স্যরি বলেন।'

'ফাক ইউর স্যরি, ফাকিং গার্ল, এরকম মেয়ে আমি খেয়ে দেই... '

এবং নারী শরীরের বর্ণনাতীত সব অশ্রাব্য ভাষার ব্যাবহার। ফলাফল, মেয়েটির অন্যান্য সহপাঠীর আগমন। স্যরি বলা এবং না বলা নিয়ে তর্কাতর্কি। এক পর্যায়ে উত্তম মধ্যম বিতরণ। এইবার পরিচয় জানা গেলো, তিনি স্বনামধন্যা এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। প্রসঙ্গত ছাত্রীটিও স্বনামখ্যাত আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রাজুয়েশন শেষ করা শিক্ষানবীশ। ইচ্ছা করেই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচয় আড়াল করলাম।

তো সেই শিক্ষকের সামাজিক অবস্থা চিন্তা করে পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেয়া হলো। বেচারা। এমনিতেই চরম শিক্ষা পেয়েছে, ভেবে। কিন্তু কিসের কী? চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। সে নিজের দোষ আড়াল করে দুই প্রতিষ্ঠানকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো। এইবার দেখো, মজা কাকে বলে কত প্রকার এবং কি কি?

এদিকে মেয়েটির জীবন একদম ছারখার যাকে বলে। সমানে সাইবার শ্ল্যাং এ জর্জরিত। কেউ কেউ 'দেখে নিবো, কেউ শুয়ে ছাড়বো' বলে হুমকী ধামকি দিচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, উক্ত শিক্ষকের কিছু কিছু ছাত্রীও নাকি শিক্ষকের সুযোগ্য শিক্ষার প্রমান দিতে মরিয়া। একজন অতি আবেগী ছাত্র নাকি প্রিয় শিক্ষকের হয়ে মামলাও করেছে! তাদের যুক্তি শিক্ষক এটা মুখে বলেছেন, করেন নি তো!

আরো আজব তথ্য হচ্ছে উক্ত শিক্ষক নাকি ক্লাসে, সামান্য ব্যাপারেই *...ক, *...কিং শব্দ উচ্চারন করেন। এটা নাকি তার স্টাইল। বাহ্, কী অধঃপতন!

তারা মানে তার ছাত্রছাত্রীরা নাকি এসব টার্মে অভ্যস্থ! ভালো কথা, তোমরা অভ্যস্থ আরো হও। অন্য কেউ তো অভ্যস্থ না। সেটা তো বোঝতে হবে, নয় কি?

রোমহর্ষক কিছু তথ্য অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যাপারে কথিত আছে।
তিনি নাকি কোন এক মেডিকেল ছাত্র হত্যার চার নাম্বার আসামি ছিলেন। এরশাদ সরকারের আমলে বাপের কলকাঠিতে মুক্ত হয়েছেন। তার পোষা খরগোশ খাওয়ার অপরাধে প্রতিবেশী কুকুরের চোখ গেলে দিয়েছিলেন। কর্মস্থলে আম পাড়ার অভিযোগে এক কর্মচারীর মাথা থেঁতলে এবং হাত ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। এমন আরো কাহিনী নাকি তাকে ঘিরে জমজমাট।

থাকুক, সেটা আমাদের মাথা ব্যাথা না। কথা হলো কর্তৃপক্ষ তাকে কিভাবে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়? তার তো এখন পাবনা থাকার কথা। রোগ থাকলে চিকিৎসা ও নিশ্চয় থাকবে, নাকি?

এখন আসি আপনাদের কাছে। আমি নিজেকে অনেক প্রশ্ন করেছি। উত্তর পাই নি। তাই আপনাদের দারস্থ হলাম।

১. কোন শিক্ষক কি কোন ছাত্রীকে এভাবে কথা বলতে পারে?
২. কোন পুরুষ কি কোন নারীর সাথে এভাবে কথা বলতে পারে?
৩. কোন বাবা কি কোন মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারে?
৪. কোন ছেলে কি কোন মায়ের সাথে এভাবে কথা বলতে পারে?
৫. কোন ভাই কি কোন বোনের সাথে এভাবে কথা বলতে পারে?

আমি সবগুলো জায়গায় নিজেকে বসিয়ে উপরে উল্লেখিত ভিন্ন ভিন্ন জনের কাছে উত্তর জানতে চেয়েছি, মনে মনে। কোন উত্তর পাইনি। তাই আমার মন খারাপ। ভীষণ খারাপ। যেমনটা হলে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছা করে, তেমনতর খারাপ।

সবচেয়ে কষ্টের কথা কি জানেন? আমি ও একজন শিক্ষক। আমার চেনা জানা শিক্ষকের সংজ্ঞাটা বদলে দিচ্ছে ঐ শিক্ষকের মুখ নিসৃত বিষ্টা। এটাই আমি নিতে পারছি না। অসুস্থ বোধ করছি। বমি করে সব ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। সব।

সবার মন খারাপ করে দিলাম তো, আসুন এবার একটা মন ভালোর গল্প শুনি-

শীতের ভোর। চারদিক ঘন কুয়াশায় ডুবে আছে। মাঘের শীতে নাকি বাঘ পালায়। আর আমরা তো আমরা। আমরা বলতে ক্লাশ থ্রিতে পড়ুয়া দুই পুঁচকে। আমি রুবা, রোল দুই, আজম, রোল এক। আর আমাদের হেড স্যার। রিকশায় যাচ্ছি। আমাদের বৃত্তি পরীক্ষা। তখন ক্লাশ থ্রিতে এই পরীক্ষা হতো। এখন হয় কিনা জানিনা।

আমাদের এলাকায় তখন ক্লাশে একটু ভালো করা ছেলে মেয়েরা স্কুলের অলিখিত সম্পত্তির মতো ছিলো। এখনো কি আছে? না মনে হয়। তাদের দেখভালের দায়িত্ব একমাত্র স্কুলের। মা বাবা রা সন্তানাদি স্কুলে দিয়েছে, এই কত, আরকি চাই টাইপ। গাধাকে ঘোড়া বানানোর জন্য শিক্ষকরা তো আছেনই। তা না হলে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে বাচ্চাকাচ্চা, বাপ মা বাদ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্যার!

দাঁতে দাঁত ঠোকাঠুকি আর শীতের কাঁপাকাপি দেখে স্যার পরম মমতায় আমাদের দুজনকে তার চাদর দিয়ে জড়িয়ে নিলেন। শুধু একটা ফ্রক পরে আছি এই শীতে! একটু কপট রাগও করলেন যেনো। এই এতটুকু ছিলাম, রিকশার পাদানি নাগাল পেতাম না। তবে স্যারের স্নেহের নাগাল পেয়েছিলাম ঠিকই। এই দেখুন, উষ্ণতাটা যেনো এখনো লেগে আছে!

কোন শিক্ষকের কথা মনে হলে এখনো আমি সেই কুয়াশামাখা ভোরে ফিরে যাই। যেখানে এক শিক্ষকের হৃৎপিন্ড তার সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীর শীত তাড়াতে ব্যাস্ত। স্যার, আপনার কাছ থেকে কিছু নিতে পারি আর না পারি, আমি আপনার হৃৎপিন্ডটা নিয়েছি স্যার। আমার লিলিপুটের মতো শিক্ষক জীবনে আমি আমার সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সেটা ভাগ ভাগ করে দেই। সব সময় দিব। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন স্যার।

পরিশেষে একটি প্রশ্ন রেখে শেষ করছি। কবে মানুষ বুঝবে, একজন নারী শুধুমাত্র একটি বিশেষ জননাঙ্গ সম্বলিত মানুষ না? সে কোন না কোন বাবার রাজকন্যা, কোন না কোন রাগী ভাইয়ের আদুরে বোন, একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, স্নেহ বাৎসল সন্তানের মা, একজন প্রিয় ছাত্রী, কারো না কারো বন্ধু, কারো না কারো প্রিয় সহকর্মী এবং অতি অবশ্যই কারো না কারো প্রেয়সী। এতগুলো পরিচয়ের পরও শুধুমাত্র আদিম অসভ্য রুপেই নারীকে ঘায়েল করতে হয়?


__________________________

 

Image may contain: 1 person, stripes

 

ডা.ছাবিকুন নাহার
মেডিকেল অফিসার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়