Ameen Qudir
Published:2018-02-19 19:10:08 BdST
কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে বাঁশি সঙ্গীত হারা
ডা. তারিক রেজা আলী
_________________________
স্বপন ভাই, আবু সাঈদ মোহাম্মদ জাকারিয়া স্বপন। আমাদের অতি প্রিয় আপনজন স্বপন ভাই। আমরা তো জানতাম স্বপন ভাই খুব বেশীদিন আমাদের মাঝে থাকবেন না, চলে যাবেন না ফেরার দেশে।
গত প্রায় এক দশক ধরে তিনি ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলেছেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। কোনদিন মন খারাপ করে থাকেন নি। এমনকি যখন ধরা পড়লো কর্কট রোগের বিস্তার হয়েছে তাঁর ঐ সৌম্য দেহে, তখনও কেউ স্বপন ভাইকে মুষড়ে পড়তে দেখেন নি। যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে একদিন ঘুমিয়ে পড়তে হয়। স্বপন ভাই তো তাই করেছেন। তাহলে কেন এত খারাপ লাগছে। কেন গত তিন-চার দিন আচ্ছন্ন হয়ে আছি তাঁর চিন্তায়, কেন বারবার ভেসে উঠছে তাঁর মুখ। না, রোগে ক্লিষ্ট মুখ নয়, ভেসে উঠছে সেই ১৯৮৫ সালে দেখা অনিন্দ্য সুন্দর মুখ, সুঠাম দেহের স্বপন ভাই।
আমরা যখন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হোলাম ১৯৮৫ সালে, স্বপন ভাই তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সারা জীবন তাই থেকেছেন। তাঁর সামনে গেলেই আমি প্রথম আর তিনি তৃতীয় বর্ষের সিনিয়র ভাই। পোষ্টারের লেখা খারাপ হচ্ছে বলে রাগ করেছেন, দেওয়ালে চিকা কিভাবে মারতে হয়, মই এর উপরে দাঁড়িয়ে ভারসাম্য রেখে কিভাবে লেখাটা লিখে শেষ পোঁচ টা দিতে হবে যাতে কালি চুঁইয়ে না পড়ে তাও তো শিখেছি তাঁর কাছে। ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী, আবার সন্ধানীর কর্মী। আমাকে সন্ধানীর কাজে এ্যাকটিভ করেছেন বিল্লাল ভাই আর স্বপন ভাই। কত অসংখ্য স্মৃতি বার বার ডানা ঝাপটায়, এলোমেলো করে দেয় সবকিছু। ১৯৮৬-৮৭ সালে সন্ধানীর চট্টগ্রাম কনফারেন্সে নিজে না গিয়ে পাঠালেন আমাকে আর ডাল্টন ভাই কে। একেবারে জুনিয়র ছেলের উপর কি বিশাল নির্ভরতা।
এরপর কত ইতিহাস। কত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। হোস্টেলে কি অমানবিক ভাবে তাঁর উপর হামলা হয়েছে, আমাদের বর্ষের এক ছেলে পর্যন্ত তাঁর সুন্দর শরীরে হকিস্টিক দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করেছে, কোনভাবেই আমি তা ভুলতে পারি না। পরবর্তীতে প্রতিশোধের কথা বলতেই স্বপন ভাই তা হেসে উড়িয়ে দিতেন, বলতেন রাজনীতি করতে গেলে এসব কত কিছু সহ্য করতে হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে স্বপন ভাই যে পড়তে বসলেন, নিরবিচ্ছিন্ন একাগ্র চিত্তে লেখা পড়া, একবারে তৃতীয় ও ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষা পাশ করে ছাত্রত্ব শেষ করে ডাক্তার সমাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জড়িত হলেন, ছিলেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে রাজপথের লড়াকু সৈনিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর রয়েছে গৌরবজনক ভূমিকা।
যখন সমাজকে আরো বেশী দেবার সময়, তখনই আক্রান্ত হলেন কর্কট রোগে। স্রষ্টার ইচ্ছা। আমাদের কি করার আছে। আমরা যে কেউ যে কোন সময় মারা যেতে পারি এটা একধরণের সত্য, আর কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর প্রহর গোনা আরেক ধরণের সত্য। সে অবস্থায় থেকে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে আত্মনিয়োগ করতে যে অসামান্য দৃঢ় মনোবলের দরকার, স্বপন ভাই এর সেটা ছিল। এখানেই তিনি আর সব মানুষের থেকে আলাদা।
পরপারে ভাল থাকবেন প্রিয় স্বপন ভাই। অনেক অনেক ভালবাসি আপনাকে। আপনি আছেন এবং থাকবেন আমাদের চিন্তায়, মণনে, চেতনায়।
তোমায় দেখবে বলে এ ফুল ফুটেছে
তোমায় দেখাবে বলে সূর্য উঠেছে
তোমার জন্য নতজানু এ আকাশ
একবার এসে তুমি দেখে যাবে নাকি.....
___________________________
ডা. তারিক রেজা আলী । সহকারী অধ্যাপক , রেটিনা। বিএসএমএমইউ।
আপনার মতামত দিন: