Ameen Qudir

Published:
2017-09-23 15:46:06 BdST

ভর্তি বাণিজ্য : মহামারী নাকি হত্যাকারী




 

 

রাহাত আহমেদ


________________________________


চলছে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা !!! নিয়ম নাই কানুন নাই যার যেমন খুশী ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচী দিয়ে দিচ্ছে !

যেমন ধরুন, ঢাকার একটির আজ সকালে তো আরেকটির পরীক্ষা বিকেলে ! ঐদিকে আবার সাভারে পরীক্ষা আগামীকাল ! তারপর দিন হয়তো একই সাথে পরীক্ষা হওয়ার ঘটনাও ঘটছে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ! এইদিকে আবার সিলেট, বরিশাল ও রংপুরও আছে ! নোয়াখালী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়াসহ দেশের প্রায় পঞ্চাশেক ইঞ্জিনিয়ারিং/পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন অথবা অভিন্ন সময়ে অথবা অল্প সময়ের ব্যবধানে চলছে এই ভর্তি পরীক্ষা বাণিজ্য !!!


মাঝখান থেকে শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে :( একদিক সামলাতে গিয়ে হারাতে হচ্ছে আরেকদিক !!! আবার প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা ইউনিট আছে !!! যতবেশী ইউনিট ততবেশী ফরম পূরণ আর ততবেশী টাকা !!! টাকায় টাকা, কাড়ি কাড়ি টাকা, ঘরভর্তি টাকা !
এইটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, একটি মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্যে এইটা একটা যুদ্ধ সমান !!! হয়তো উচ্চবিত্ত পরিবারটি এফোর্ড করতে পারলেও মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্যে এর ব্যয় বহন করা নিতান্তই মরার উপর খাড়ার ঘা !!!


দেশের কোমলমতি ছোট ছেলেমেয়েরা সদ্য মাধ্যমিক পাশ করে, দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকদের এমন গোঁড়ামী ও অর্থলিপ্সার শিকার হবেন এই নিয়তিকেই হয়তো তারা মেনে নিয়েছে অথবা মানতে বাধ্য হয়েছে !!! অনেক পরিবারই তাদের পালিত গরু ছাগল বিক্রয় করে অথবা গয়নাগাটি বন্ধক রেখে কিংবা ধারদেনা করে নিঃস্ব হয়ে তার সন্তানসন্ততির হাতে টাকা তুলে দিয়ে বলেছে," যা বাবা পরীক্ষাটা দিয়ে আয় "। আবার যথেষ্ট মেধা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অর্থ ও সময়ের অভাবে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে পরীক্ষা দেয়াও হয়ে উঠেনা !!! জানি এই খবরগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনো রাখেনি রাখবেওনা কোনদিন !


শুধু কি তাই, প্রায় ২-২.৫ মাস ধরে চলা এইসব পরীক্ষার অর্ধেকটা সময়তো ছেলেমেয়েদের রাস্তায় কাটিয়ে দিতে হয় !!! এরা পড়বে কিভাবে, প্রিপারেশন নিবে কখন !!

আবার ভর্তিপরীক্ষায় বেশী ফেল করলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ বলেন , " নাহ, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা রসাতলে গেল !!! " স্যারজি, আপনি একজন শিক্ষার্থীকে বিগত ২.৫ মাস যাবত রাস্তায় রাস্তায় দৌড়িয়ে নিয়ে বেড়ালেন, কি খেলো না খেলো, কই থাকলো না থাকলো, পড়তে পারলো না পারলোনা তার কোন খবর নাই !!! আর এসি রুমে বসে উঁচুমানের একটা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে বলবেন, দেশটা রসাতলে গেল !

একবার বুকে হাত দিয়ে ভেবে দেখুন তো, ঠিক একই বয়সে, আপনি তার অর্ধেকটাও জানতেন কি না !!
পঞ্চাশেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট ভিত্তিক ফর্ম পূরণ করতেই একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় প্রায় ৫০,০০০ টাকা !

আবার সবচেয়ে বেশী অর্থব্যয় হয় পরিবহণ খাতে !!! ঝড়, বৃষ্টি, বাদল কিংবা ঈদের মৌসুম হলে তো কথাই নেই , টিকিট পাওয়া সবমিলিয়ে প্রতিবছর ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের যে পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা !!! আর স্টুডেন্টটি যদি মেয়ে হয় তাহলেতো পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে মুভ করতে হয় !!! কিছুদিন আগে রোড এক্সিডেন্টে মারাও গেল কয়েকজন শিক্ষার্থী !!! আচ্ছা, আমি যদি এই কারনে আপনাদের ঠাণ্ডা মাথার খুনি বা হত্যাকারী বলি, তাহলে কি আমার খুব বেশী অন্যায় হয়ে যাবে !

 

আমাদের শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য একটি সমন্বিত ভর্তিপরিক্ষা চালুর উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন এই স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের একগুঁয়েমির কারনে !!! সমস্যা হয়েছে র‍্যাংকিং নিয়ে !!! আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই র‍্যাংকিং নির্ধারণ করার আপনি কে !

 

এইটা নির্ধারণ করবে দেশের শিক্ষার্থীরা !!! ফরমে এলোমেলোভাবে সবকয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেয়া থাকবে, অনলাইনে বসে শিক্ষার্থীগন পছন্দ করবেন আর তাদের চয়েস অনুযায়ী প্রতিবছর হবে র‍্যাংকিং !!! জাফরউল্লাহ স্যার অবশ্য কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শুরু করেছেনও !

 

এবার প্রশ্ন আসে টাকার ভাগ নিয়ে ! জাফরউল্লাহ স্যার ও আরেকজন শিক্ষাবিদ সময় টেলিভিশনে বললেন যে, এই ভর্তি বাণিজ্য করে শিক্ষকগন এত টাকা ইনকাম করেন যে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা !!! যাইহোক, প্রথমত আমার কথা হচ্ছে ফরমের টাকা সুষমভাবে বণ্টন করা হোক তাতে বিশ্ববিদ্যালগুলোতে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান ও কিছুটা উন্নয়নমূলক কাজও হবে । কিন্তু যেহেতু এইখানে টাকার প্রশ্নে সবাই বিভোর, তাই শিক্ষার্থীদের করা র‍্যাংকিং এর ভিত্তিতে সিংহভাগ থেকে সিংহীভাগে টাকা বণ্টন করে দিলেই তো হলো !

 

সমন্বিত সিলেবাস ও প্রশ্নপত্র প্রণয়নের মাধ্যমে এমন একটি সমন্বিত পরীক্ষাব্যবস্থা হোক যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দনীয় সুবিধাজনক ভেন্যুতে পরীক্ষা দিতে পারবে ! বিশ্ববিদ্যালয়ের ক খ গ ঘ ইউনিট টোটাল চার দিন আর একদিন মেডিকেল ও একদিন ইঞ্জিনিয়ারিং !!! ব্যস মাত্র ছয়দিনে (মাঝে গ্যাপ থাকবে) বাংলাদেশের সবগুলো ভর্তিপরীক্ষা দেয়া শেষ !!! তবে এক্ষেত্রে অবশ্যুই মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা আগে হতে হবে :)
আর চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা তাদের মেধাক্রম অনুসারে পছন্দনীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দনীয় বিষয়ে মাইগ্রেশন করতে পারবে সর্বোচ্চ তিনবার ।
আপনি বলতে পারেন, এক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা আছে !

এইটা আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ ভাই, নতুন একটা ফটোকপি মেশিন বের হয়েছে যা মিনিটে ১০০০ টি কপি বের করতে পারে । কেন্দ্রে থেকে প্রশ্নপত্রের একটি কোড মেশিনে পৌছে যাবে পরীক্ষার দিন সকাল ৮ঃ৩০ টায় আর মেশিন সেইটাকে ডিকোড করে অটোমেটিকভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাজার হাজার প্রশ্নপত্র ছাপাতে শুরু করবে !

প্রশ্নফাঁসের প্রশ্নই আসেনা !

 

আপনি হয়তো বলবেন যে, আমি এইগুলা পার করে এসেছি আমার এইসব নিয়ে ভেবে এত কি লাভ !!!??? কিন্তু ভাবতে আপনাকে হবেই কারন আপনার ছোট ভাইবোন কিংবা বাচ্চাকাচ্চা আছে !!! তাই, এইটা এখন একটি জাতীয় দুর্ভোগ আর এইটাই মহামারী !


জানিনা আমার লেখাটা কতদূর পৌছাবে ! লেখায় যেমন সমস্যার কথা বলা আছে তেমন সমাধানও আছে :)
তবে এমন একটি সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা এখন সময়ের দাবী ।
বিঃদ্রঃ আলোকিত হোক মন, জয় হোক শিক্ষার

__________________________________

রাহাত আহমেদ

Former Intern Doctor at Rajshahi Medical College Hospital, Rajshahi, Bangladesh

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়