Ameen Qudir

Published:
2017-07-31 19:12:53 BdST

তসলিমাকে নিয়ে একদল লোকের বেলেল্লাপনা দেখে তাজ্জব হতে হয়


 


 

 

ডা. রেজাউল করীম
_________________________________

তসলিমা নাসরিন ঔরঙ্গাবাদ পৌঁছলেও বিক্ষোভের জোরে মুম্বই ফিরে যান। ভেবে আশ্চর্য হই যে কিছুলোকের গুণ্ডামীর কাছে শক্তিমান সরকার কিভাবে মাথা নত করে। কিম্বা এই হয়ত রণকৌশল, আর কিছু নাহোক এতে কিছুলোকের রাজনৈতিক সুবিধা হবে! দেশের আনাচে কানাচে মুসলিম বিরোধী যে সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতার কল্লোলধ্বনি শোনা যাচ্ছে, এই ঘটনা তাকে আরো শক্তিশালী করবে।


তসলিমাকে নিয়ে একদল লোকের বেলেল্লাপনা দেখে তাজ্জব হতে হয়। তসলিমা লেখিকা হিসেবে নিম্নমানের। তার ভাষায় তেমন লালিত্য নেই, বিষয় বস্তুর কোন বৈচিত্র নয়। সবসময় তাঁর ব্যাকুল প্রচেষ্টা হল যেনতেন প্রকারে প্রচারের আলোয় থাকা। তিনি দেশে বিদেশে নানা সম্মান পেয়েছেন খুব সম্ভবত: একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরুদ্ধে মুখর সমালোচনার জন্য। তাঁর নির্বাচিত কলাম পড়ে আমার মনে হয়েছে যে তাঁর "হোম ওয়ার্ক"র অভাব আছে। এখনো তাঁর যেসব কলাম বা কবিতা পডি তাতে বৈদগ্ধের অভাব আছে, পরিশীলিত শব্দচয়নে তার দুর্বলতা বেশ পীড়াদায়ক।অথচ, তাকে নিয়ে মোল্লাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সব মতবাদের মৃত্যু হয় নিজস্ব দর্শনের দুর্বলতার জন্য- তসলিমার মত একজন দুর্বল লেখকের লেখনী যদি ইসলামের বড়সড় ক্ষতি করে তাহলে বুঝতে হবে সেটা দর্শনের ত্রুটি- ঝড়ে পড়া বকের জন্য ফকিরের কেরামতি বাডিয়ে লাভ নেই।

 

 


অনেকে তসলিমার সাথে সলমান রুশদির তুলনা করেন। আমার মতে সেটা অতীব হাস্যকর তুলনা। সলমান রুশদির মত সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষমতা তাঁর নেই, অমন সুললিত মনোরম ভাষ্য বিশ্বসাহিত্যে অনন্য। তাঁর "Satanic Verses" এক অনন্য সাহিত্য কীর্তি। নবী সম্পর্কে রুশদির ব্যক্তিগত মতামতের সাথে আমি একমত নই, কারন নবীকে বেনিয়া বানিয়ে দেওয়া সমসাময়িক ইহুদি ও রোমান ভাষ্যেও পাওয়া যায় না। কিন্তু সে তাঁর ব্যক্তিগত মত। তিনি আরব সমাজের যে ভাষ্য রচনা করেছেন তা এককথায় অপূর্ব। সুরা নজমের যে অনুবাদ তিনি করেছেন তা আমার পড়া সবচেয়ে অনুপম অনুবাদ। তাই, আমি মনে করি তসলিমা ও রুশদিকে একই ব্রাকেটে ফেলা যথেষ্ট অবমাননাকর।

 

 


কারো কারো রাগ হতে পারে তবু তসলিমার চরিত্রের আরেকটি দিক তাঁর নারী সত্তার জন্যও যথেষ্ট অবমাননাকর বলে আমার মনে হয়েছে। বহুগামীতা বা যৌন আলোচনা যখন সাহিত্যের পরিধি ছাডিয়ে ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবান্বিত করে, তখন তা আর সুস্থ সাহিত্য থাকে না। তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস, তাঁর ব্যক্তিগত যাপন ও জীবনচর্যা নিয়ে তিনি যা খুশি করতে পারেন কিন্তু সরবে তা সংবাদ মাধ্যম বা সোস্যাল মিডিয়াই প্রকাশ করলে তাঁর মান বাডে কিনা সন্দেহ আছে। আমাদের সংবাদ মাধ্যমের কাছে সব বিকৃতিরই বিপনন মূল্য আছে তাই এগুলো মূল্যবান মনে হতে পারে।

 

 

কিন্তু মানবসমাজ তাঁর দ্বারা সত্যিই কতটা উন্নত হল তার বিচার তোলা থাক ভবিষ্যতের জন্য। তসলিমা মুখে যাই বলুন, তাঁর মধ্যে একটি প্রবল পলায়নী মনোবৃত্তি আছে- যে সমাজকে তিনি আঘাত করে বাঁচাতে চাইছেন সেই সমাজের বাইরে গিয়ে আঘাত করলে তা সমাজের কোন কাজে লাগবে না। তিনি দূর থেকে সমালোচনা না করে যদি ভেতর থেকে প্রতিবাদ করতেন, তাহলে জগদ্দল সমাজের পাপ হয়ত কমত। তাঁর প্রতিবাদ ও যথার্থ মর্যাদা পেত। ইসলামের মেল-শভিনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁকে আমি উচ্চ মার্গের সাহিত্যিক মনে করি না, কিন্তু তিনি নিশ্চয় পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের উপযুক্ত সহযোদ্ধা- বাইরে থেকে লড়ে একে একচুলও নড়ানো যাবে না। এরজন্য চাই ধারাবাহিক, অবিরাম অন্তর্লীন আঘাত।

____________________________

ডা. রেজাউল করীম , লোকসেবী প্রখ্যাত চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়