Ameen Qudir

Published:
2017-07-19 17:06:33 BdST

“ কেন যে ডাক্তার হয়েছিলাম?”



 

ডা. মীরা মমতাজ সাবেকা

_____________________________

 

উৎসবের আমেজ যেন কাটতেই চায়না। সকলের ঘরে ঘরে ঈদ আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে, সকলে এই কয়েকটি দিনের জন্য সকল কর্মব্যস্ততা দূরে সরিয়ে রেখে সার্বজনীন আনন্দে অংশগ্রহনের সুযোগ পায়। অবারিত এ আনন্দধারায় বঞ্চিত থাকতে হয় চিকিৎসক কে। কেননা অসুখ বিসুখ তো আর বলে কয়ে আসেনা।

 

রোগ-বালাই কি করে জানবে যে, আজ ঈদ। এমনি এক দিনে যদি ডাক্তারকেই অভিযুক্ত করে সমাজ বলে ওঠে “ ইস, আজকের দিনেও টাকার পিছনে ছুটতে হবে?” তখন আর কি উপায় বলুন। চিকিৎসক তখন কেবল ভাবে “ কেন যে ডাক্তার হয়েছিলাম?”
আর যাই হোক, সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে এই ঈদের সময়টুকুতে অমুসলিম ডাক্তার না থাকলে, মুসলিম ডাক্তারের উৎসব শিকেয় তুলতে হত। উপরন্তু হাসপাতালের ক্যান্টিন এর লোকজনের তো ঈদ আছে! অগত্যা বেচারা ডাক্তারের উপবাসেই উৎসব পালিত হয়। এহেন পরিস্থিতিতে কাটা ঘায়ে নুন ছিটিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়, “ঈদের ছুটিতে ডাক্তারের অভাবে হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ব্যহত”। মানবসেবা যার ধর্ম, জনগণের কল্যাণে তার জীবন উৎসর্গগকৃত। তার আবার উৎসব কিসের? তার কর্তব্য কাজে কোন অবহেলা ক্ষমার অযোগ্য, পান থেকে তো আর চুন খসলে চলবেনা!

 

 


এরি মধ্যে একদিন একজন অভিযোগ করে বললেন,এই প্রাইভেট প্র‍্যাক্টিসের জন্যই সরকারী হাসপাতালে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। বলা বাহুল্য, সেই বিচক্ষন মহোদয় একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি কখনো সরকারী হাসপাতালে পদধুলি দেননি। তাহলে তিনি জানতেন যে, এদেশের সরকারী হাসপাতালে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কত অপ্রতুল। তার চেয়েও অপ্রতুল চিকিৎসা সেবার সহায় সরঞ্জাম। একেকটি সরকারী হাসপাতাল তার ধারণক্ষমতার চেয়ে বহুগুন বেশী রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। বিছানার অভাবে রোগী মাটিতে থাকে, এতে রোগীর যেমন কষ্ট হয়, তেমনি সেই মাটিতে শোয়া রোগীর সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় ডাক্তারের প্রাণান্তকর পরিশ্রম হয়।
ডক্তারের কর্মক্ষেত্র নিয়ে কথা বললে অনেকে বিশ্বাস করবেন না, অনেক হাসপাতালেই তাদের Dutyroom এর পরিবেশ অত্যন্ত নিম্নমানের। মহিলা ডাক্তারের জন্য পৃথক টয়লেট আমি এই চাকরীজীবনে পাইনি বললেই চলে। সরকারি হাসপাতালের অবস্থা আরো শোচনীয়। এ অবস্থার উন্নতি হয়নি, কারণ একজন চিকিৎসক তার সেবা কার্যক্রম এতটাই ব্যাস্ত থাকেন যে অন্যান্য “ক্ষুদ্র” বিষয়ে তার মনোযোগ থাকেনা।

 

 

 

সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসকের পদোন্নতির পূর্বশর্ত হল স্নাতকোত্তর ডিগ্রী। এপথ দুর্গম ও কষ্টসাধ্য। ডাক্তারের সেই স্বপ্নসাধ পূরণ ব্যায়বহুল ও সময়সাপেক্ষও বটে। সুতরাং পদোন্নতি এদেশের অধিকাংশ চিকিৎসকের ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যায়। ফলশ্রুতিতে, একজন এমবিবিএস মেধাবী চিকিৎসক, যিনি বয়স ও অভিজ্ঞতার ভারে নুব্জ, তার অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়না। তিনি যেন বটবৃক্ষ। ছায়াদানকারী আর ভার বহনকারী। তিনি কলুর বলদের মত, ঘরের খেয়ে বনের মেষ তাড়ান। অথচ একজন অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার বিশেষজ্ঞের মতই বিশেষ অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হন। এত গেল এমবিবিএস ডাক্তারদের কথা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন ও বহুক্ষেত্রেই যোগ্যতার নিরিখে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত।

 

এত অব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতেই ডাক্তারগণ অভ্যস্ত। তাই তার অবস্থাগত ও অবস্থানগত পরিবর্তন হয়না। ভবিষ্যত আরো অন্ধকার। কেননা ডক্তারকে অধিকারজ্ঞ্যন দেয়ার চাইতে দায়িত্বজ্ঞান দেয়ার মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী।


______________________________

লেখক ডা. মীরা মমতাজ সাবেকা । লোকসেবী চিকিৎসক।

Neurologist & Medicine specialist. MD(Neurology), MRCP (UK)

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়