Ameen Qudir

Published:
2017-05-29 17:33:53 BdST

ডাক্তারি নিয়ে এই লেখাটি পড়লে চোখের জল ধরে রাখতে পারবেন না


 

 

 

 


ডা. নাসিমুন নাহার
__________________________

 

টাইমলান জুড়ে ফাইনাল প্রফ পাশের খবর----এত এত ডাক্তারের ছড়াছড়ি।অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে আছে।

যেকোন ডাক্তারের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে এমবিবিএস পাশের খবর জানার মুহূর্তটুকু।আমি ফোনে জেনেছিলাম।আমার এক ক্লাসমেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডের সামনে থেকে ফোন করে রীতিমতো চিৎকার করে বলেছিল---- আরে মিম্ মি ডাক্তার হয়ে গেলা তো !!! আমার একহাতে ছিল মোবাইল আরেক হাতে
আহ্ নাফকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম।খবরটা শোনা মাত্রই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এসেছিল, বুকের ভেতরে ঢিপ ঢিপ করছিল, চোখ ফেটে অঝরে পানি ঝরছিল।ভাগ্যিস ঐ সময়ে বাসায় আর কেউ ছিল না।চোখের পানি মানুষকে দেখাতে বড্ড অস্বস্তি আমার।

 

 

আমার ডাক্তার হবার জার্নিটা মোটেও সহজ ছিল না।একেবারেই সহজ ছিল না। এদেশের আর সব ডাক্তার হওয়া ছেলে মেয়ের মতোই কঠোর অধ্যবসায়, জীবনের অজস্র সুন্দর সময় ত্যাগের বিনিময়ে এবং না বলা বহু কষ্ট বুকে চেপেই ডাক্তার হতে হয়েছে আমাকে।তবে ঐ কঠিন সময়গুলোতে একমাত্র প্রাপ্তি ছিল --আমার আহ্ নাফ।মূলতঃ যার মুখের দিকে তাকিয়ে ই শেষ পর্যন্ত ডাক্তার হবার কঠিন জার্নিটা শেষ করা সম্ভব হয়েছিল আমার পক্ষে।অনেকবারই quite করার সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছিল আমাকে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারনে।তবুও শেষ পর্যন্ত আমি পেরেছিলাম......প্রচন্ড জিদ আর 'আমি অবশ্যই পারব' এই মনোবলের জন্য।

 

 

প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে আমাকে পার হতে হয়েছে পুরোটা এমবিবিএস কোর্স।খুব কম সময়ই তখন ছিল আমার জীবনে যখন আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত না থাকতাম---জীবন নিয়ে প্রচন্ড frustrated সেই আমি মরে যেতে চাইতাম সব সময়, মরে যাবার অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্ল্যান বানাতাম !!

লেখাপড়ার চাপ তো ছিলই; সেইসাথে বাচ্চাটার জন্য নাড়ি ছেড়া মন কেমন করা অস্থিরতা ----যা কখনো লিখে বোঝানো যাবে না।পাঁচ মাসের ছোট্ট বাচ্চা কে যখন আমার আব্বু আম্মু বোনেদের কাছে ঢাকায় রেখে একা ময়মনসিংহ রওনা হলাম পুরো তিনঘন্টা নিরাপদ বাসে কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হবার মতো অবস্থা হয়েছিলো আমার।কিন্তু যেতে তো হবেই আমাকে।প্রফ দিতে হবে।শারীরিক ভাবেও ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়ি ঐসময়ে।কিন্তু কখনোই মনের জোর হারাইনি; জানতাম---ডাক্তার হতেই হবে at any cost . শুধুমাত্র ডাক্তার হলেই জীবনটা বদলে যাবে আমার।নাহলে সারাজীবন আশেপাশের মানুষরূপী রাক্ষস রাক্ষসীরা আমাকে নিয়ে সার্কাস খেলবে।

যাহোক, নতুন চিকিৎসকদের জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো।পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশায় স্বাগতম তোমাদের।ইন্টার্নশীপটা কষে করবা।এই এক বছর হাসপাতালকে বাসা বাড়ি বানিয়ে ফেইলো।এই এক বছর ই মূলত ডাক্তারী করে চলার সারাজীবনের ভিত্তি তৈরির সময়।

আর যারা এবার পাশ করতে পার নাই তাদেরকে বলছি---মন তো অবশ্যই খারাপ হবে।কিন্তু হতাশ হইও না প্লিজ।দুদিন আগে আর পরে ডাক্তার ই হবা তোমরা---ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কিছু হবার কোন সম্ভাবনা নাই।
আমরাও অনেকেই আছি যারা সাপ্লি খেয়েই ডাক্তার হয়েছি এবং দারুণভাবে জীবন কাটাচ্ছি আল্লাহর রহমতে।আমরা যখন পেরেছি তোমরাও অবশ্যই পারবা।শুধু ধৈর্য ধরে দাঁত কামড়ে পড়ে থাক বইখাতা হাতে নিয়ে।

সবশেষে একটা কথা বলি-----এ দেশের মানুষ জন যতই ডাক্তার পেটাক,গালি দিক দিনশেষে এরাই আবার নিজের সন্তানকে ডাক্তার ই বানাতে চায়।সুতরাং বুঝতেই পারছ পাবলিক ডিমান্ড ! তোমরা already সেই অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলেছ--ডাক্তার হয়ে গেছ।সুতরাং আশেপাশের জেলাস মানুষজনকে নিয়ে খুব বেশি ভাবনা চিন্তার কিছু নাই।
পৃথিবীতে যতদিন মানুষ নামক প্রাণী থাকবে ঠিক ততদিনই আমাদেরকে "ডাক্তারদেরকে" পৃথিবীর প্রয়োজন হবে-ই।

 

__________________

 

ডা. নাসিমুন নাহার । লোকসেবী ডাক্তার।

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়