Ameen Qudir

Published:
2017-05-09 15:51:10 BdST

ইন্ডিয়া চিকিৎসা প্রীতি ও স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ে সোজা সাপটা কথা


 

 

 

 

 


ডা. মিথিলা ফেরদৌস
___________________________

লেখালেখির কারনে বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্যে কিছু আক্রমণাত্মক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

তার মধ্যে দুইটা প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ ভাষায় দিতে চাই।একটি হচ্ছে এদেশের মানুষের ইন্ডিয়া চিকিৎসা প্রীতির কারণ,আরেকটি স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি।

 

প্রথমটার ব্যাপারে অনেক কথা থাকলে আমি মুল দুইটা কারণ চিহ্নিত করতে চাই,একটি হলো আমাদের তথাকথিত কিছু ইন্ডিয়া দালাল পত্রিকা কৌশলে জনগণকে ইন্ডিয়ামুখি করে তুলছে,এরা শুধু স্বাস্থ্য খাত না,আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকেও ধংসের মুখে ঠেলে দিছে।সেইব্যাপার আমার আলোচ্য না।দালালী টাই ব্যাপার।

 

একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন এরা কখনওই বাংলাদেশের ডাক্তারদের পক্ষে কোন কথা লেখে না,এদের একমাত্র কাজ দেশের মানুষকে উস্কে দিয়ে ইন্ডিয়া পাঠানো।যার ফল ভোগ করে দেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা।জায়গা জমি বিক্রি করে, সর্বসান্ত হয়ে ইন্ডিয়া যায় চিকিৎসার জন্যে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ইন্ডিয়ার বৈদেশিক আয়ের একটা মুল অংশ বাংলাদেশ।

 

কিন্তু আপনারা জানেন কিনা জানিনা,ওয়ার্ল্ড হেলথ ওর্গানাইজেশানের র‍্যাংকিং এ বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ তম,সেখানে ইন্ডিয়ার অবস্থান ১১২তম।এইসব নিয়ে কোন পত্রিকায় কখনও কিছু লেখা হয়েছে কি?কেনো লেখা হয়না?তারা কি জানেনা?নাকি জেনেও ব্যাপারটা গোপন করছে?জনগণ ব্যাপারটা ভেবে দেখুন।

 

দ্বিতীয় কারণ, সিস্টেমের অভাব,আর চিকিৎসকদের উপর অমানবিক কাজের লোড।সিস্টেম বলতে আমাদের দেশে কি কারনে রেফারেল সিস্টেম চালু করেনা বুঝিনা,ফলে সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বিকার হয়।যেমন একটা ব্রেস্টের কেস কার কাছে যাবে?একটা থাইরয়েডের কেস কোন অবস্থায় কারা চিকিৎসা করবে?একটা ব্যাক পেইন এর কেস কোন স্টেজে কাদের কাছে যাবে?কোনটা ভাস্কুলার কেস?ইত্যাদি।

 

জনগণ সামান্য সর্দি জ্বরে প্রফেসরের কাছে যায়। প্রফেসার স্যারদের কাছে যাওয়া উচিৎ কম্পলিকেটেড কেসগুলা,তাহলে স্যাররাও রুগীর প্রতি অনেক যত্নশীল হতে পারবেন।উনাদের সিরিয়াল পাওয়া নিয়ে কস্টের কারনেও অনেক রুগী দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হয়।

 

আর না হলে যায় কোয়াকের কাছে গিয়ে একগাদা এন্টিবায়োটিক খেয়ে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট করে নিয়ে আসে প্রতিনিয়ত।এছাড়া বড় বড় রোগ গুলো শেষ অবস্থা করে হাসপাতালে পাঠায় দেয় যখন করার আর কিছুই থাকেনা।

মিড লেভেলের ডাক্তারদের তেমন কোন কিছু করার থাকেনা।এমন কেনো হবে?যদি কোয়াকদের চিকিৎসা বন্ধ করা যেতো তাহলে রুগীদের হয়রানীর স্বিকার হতে হতনা।তাহলে রুগীদেরও দেশের বাইরে যেতে হতনা।

আরেকটা হলো,চিকিৎসকদের উপর অনেক কাজের লোড,যেমন যেকোন সরকারী আউটডোরে প্রতি ডাক্তার গড়ে ১০০-২০০ রুগী দেখে,ইনডোরে এক বেডের জন্যে গড়ে তিন থেকে চারজন রুগী ভর্তি হয়।প্যাথলোজি তে একটা এফএনএসি তে সিরিয়াল থাকে এক থেকে দেড় মাসের,ততদিনের ক্যান্সারের রুগী যদি হয়,এন্ড স্টেজে চলে যায়।একটা আল্ট্রা করতে বিশাল লাইনে দাঁড়ায় থেকে রুগীদের মুখে ডাক্তারদের গালি দিতে শুনেছি।

কিন্তু এখানে ডাক্তারদের দোষটা কি বলেনতো?এই সব অব্যবস্থাপনা নিয়ে কখনও কোন পত্রিকা আলাদের বলতে শুনেছেন কি?শুনবেন না কারণ তাদের কাজ দালালী। তারা সরেজমিনে গিয়ে কখনও দেখে না আসলে ঘটনা কি?

থানা হেলথ কম্পলেক্সগুলোতে সাংবাদিকরা ডাক্তারদের হুমকি দিয়ে টাকা পয়সা চাইতে আমি নিজে দেখেছি,এমন কি কলম প্যাড নিতেও আসতো।কতটা নীচে মানুষ যে নামতে পারে,
কাছে থেকে যারা এইসব অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে তারা ভালো বলতে পারবে।ডাক্তাদের পক্ষে লেখার কোন মাধ্যম না থাকায় জনগনের মধ্যে ক্রমাগত ডাক্তারদের প্রতি আক্রোশ তৈরী হচ্ছে যার ফল একসময় জনগনকেই ভোগ করতে হবে।কিভাবে ভোগ করবে অদুর ভবিষতেই তা দেখতে পারবেন।

 

স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার অব্যাবস্থাপনার জন্যে দায়ী কারা?একটু খেয়াল করুন, মুল স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা কারা কন্ট্রোল করে জানেন কি?তাতে কয়জন ডাক্তার আছে?এখন তো শুনতেছি ডিজি মহোদয় থেকে সিভিল সার্জনও অন্যদের হাতে দেয়া হবে।খুব ভালো কথা। তখনও কি বলবেন স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার দুর্নীতির জন্যে ডাক্তারাই দায়ী?

 

যাইহোক দেশটা আমাদের,তাই আমাদের স্বার্থেই আমাদের সচেতন হতে হবে,পত্রিকাওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ ডাক্তার পক্ষে জেনে,বুঝে লিখুন।কি করলে ভালো হয় সেই ব্যাপারে লিখুন। মোটকথা ডাক্তাদের প্রতি রুগীদের আস্থা,ভালোবাসা,সন্মান ফিরিয়ে আনুন।দেখবেন অসহায় মানুষ গুলোকে জমি বেচে সর্বসান্ত হয়ে দেশের বাইরে যেতে হবেনা।

আর স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা সৎ যোগ্য ব্যাক্তি দিয়ে পরিচালিত হোক।সে ডাক্তার হতে হবে এমন কোন কথা নাই,কিন্তু ডাক্তারবান্ধব হোক এই কামনা করবো।সবচেয়ে বড়কথা পুরা স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাটাকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনুন।

 

_______________________________

ডা. মিথিলা ফেরদৌস । মানবসেবী চিকিৎসক । সুলেখক। কল্যাণকলামিস্ট।

 

আপনার মতামত দিন:


ক্যাম্পাস এর জনপ্রিয়