Ameen Qudir

Published:
2017-02-04 17:29:18 BdST

এক লোভী ডাক্তারের গল্প বলি শোনো


 

ডা. আহসান হাবীব হেলাল
_________________________________


আমি একজন লোভী ডাক্তার। শুক্রবার দিন। সবাই ছুটি ভোগ করে। কিন্তু আমি ফজরের নামাজ আদায় করে ঢাকা থেকে জেলা শহরে ছুটে যাই টাকার লোভে।যেমন করে ছোটবেলায় নানাবাড়িতে দেখতাম বছরচুক্তি কিষাণ বিশ্বস্ত শুকুর মামা (আমরা কিষাণকে মামা বলে ডাকতাম) সূর্যোদয়ের আগেই লাঙল আর গরু নিয়ে মাঠে যেত চাষ করতে।

টাকার বড় দরকার আমার। ছেলে-মেয়ে দুটো বড় হয়ে যাচ্ছে। সাত আট বছর পর মেয়ের বিয়ের বয়স হলে পাত্র পক্ষ যদি শোনে, পাত্রীর বাবা-মা দুজনে ডাক্তার হওয়া সত্বেও ঢাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাহলে হয়তো কোন সম্মন্ধই আসবে না।

তাই প্রায় পুরোটাই ব্যাংক লোনে একটা ফ্ল্যাট নেয়া। আর সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে উদয়াস্ত পরিশ্রম। মফস্বল শহরে আমার বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দিয়ে যে সমস্ত রোগী দেখি তার অধিকাংশকে আমাদের মতো ডাক্তার না গেলে পয়সা খরচ করে এবং কষ্ট করে ঢাকা আসতে হতো অথবা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা নিতে হতো অথবা ঝাড়ফুঁক নিতে হতো। এর মধ্যে অনেক শিক্ষকও আছেন। তাদের দেখি লোভী ডাক্তাররের কাছে চিকিৎসা নিতে অনাগ্রহ নেই।

এতো কিছু কষ্টের পরেও মানুষের জন্য যে সামান্য উপকার করার চেষ্টা করি , তা অফুরন্ত সময় এবং অর্থ আছে এমন অনেক লোকই করেন না। এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। আমার ঘনিষ্ঠজনরা এটা ভালো বলতে পারবেন।

দুজনের বেতনের টাকায় আমার সামাজিক অবস্থা মেইনটেইন করতে কোন উদ্বৃত্ত টাকা থাকেনা বলে উদয়াস্ত এই পরিশ্রম। সমাজের বিভিন্ন স্তরে চলতে গিয়ে আমার কাছেও আর্থিক লোভনীয় প্রস্তাব আসেনি, তা নয়। সেগুলো গ্রহন করলে আলিশান বাড়ি থাকা কোন ব্যাপার ছিল না।
কিন্তু আমার পারিবারিক শিক্ষা এবং আমার বিবেক সেগুলো কখনো প্রশ্রয় দেয়না।

আমি জানি আমার মতো অবস্থা আমার অনেক বন্ধু বান্ধবের এবং সহকর্মীর।

বন্ধুরা তাইতো আমরা লোভী ডাক্তার।

______________________________

লেখক ডা. আহসান হাবীব হেলাল , সহযোগী অধ্যাপক , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। সিএম সি ২৮।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়