Ameen Qudir

Published:
2018-03-24 17:10:11 BdST

বিএসএমএমইউর দায়িত্ব নিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি: বর্ণাঢ্য জীবনের কিছু কাহিনি


 

ডাক্তার প্রতিদিন
_______________________

উপমহাদেশের একজন কীর্তিমান মানবসেবী ও বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজের গর্ব
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আজ ২৪ মার্চ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন। শনিবার সকালে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মানবতার সেবায় বিএসএমএমইউকে উপমহাদেশের একটি প্রধান রোগী ভরসাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে এই গুরু দায়িত্ব গ্রহন করেন।

তিনি একজন অনন্য অসাধারণ কর্মবীর । ইতোমধ্যেই দক্ষতার দ্যুতি জ্বালিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার অদ্বিতীয় কেন্দ্র বিসিপিএসকে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের শিক্ষালয় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিএসএমএমইউর দায়িত্ব নিলেন। সকল মহলে প্রত্যাশা, তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় ইর্ষনীয় মানে ও দক্ষতায় উন্নীত হবে।

১৯৫৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মিরের সরাই উপজেলার হাইত কান্দি গ্রামে তার জন্ম। মাতার নাম প্রয়াত সুখদা বড়ুয়া এবং পিতার নাম প্রয়াত ডা. শুভংকর বড়ুয়া। তাঁর স্ত্রী ডা. শিউলি চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস এন্ড গাইনী বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত । তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় ছেলে ডা. সুদীপ বড়ুয়া । এবং ছোট ছেলে সৌমিক বড়ুয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ছেন।

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ছাত্রজীবন থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ও গভীর মননশীল। তিনি ১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ১৯৯০ সালে এফসিপিএস, ২০০৩ সালে এমএস (নিউরোসার্জারি), ২০০৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফআইসিএস (অ্যাওয়ার্ডেড ফেলোশীপ অফ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অফ সার্জন্স) অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে অনারারি এফএসএলসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

শিক্ষকতার জীবনে তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক হিসেবে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সাবেক আইপিজিএমএন্ডআর এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাদান করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অধ্যাপক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।
২০০২ সালে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার কারণে হাইকোর্টে রিট করেন (রিটনং ২৯১০) এবং এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে তাঁকে ভূতাপেক্ষভাবে ২০০১ সাল থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৫ সালে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও শিক্ষাজীবনের অধিকারী অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিন তিন বার ডীন নির্বাচিত হয়ে সার্জারি অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক বডি সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্য। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েরও সম্মানিত সিন্ডিকেট মেম্বার।

দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গুণী এই শিক্ষকের ইতমধ্যে ৪৭টিরও বেশি গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ, নিবন্ধ দেশী-বিদেশী জার্নাল ও আন্তর্জাতিক নিউরোসার্জিকাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গাইড হিসেবে তাঁর তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এমএস ইন নিউরোসার্জারি বিষয়ক ১৫টি থিসিস পরিচালিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন।

রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএমএ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে নেতৃত্ব দেন। তিনি আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি ১৯৬৮-১৯৭০ সালে মরহুম জনাব শেখ কামালের নেতৃত্বাধীন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), বিএসএমএমইউ-এর প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি স্বাচিপ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বৈচিএ্যময় জীবনের অধিকারী অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন-এর বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখাসহ মানবসেবায় জীবন উৎসর্গকারী অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিসিপিএস-এর সভাপতি ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ স্পোর্টস মেডিসিনের সভাপতি, সাউথ এশিয়ান এ্যাসোসিয়েশন অফ নিউরোসার্জন্স-এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউরোসার্জন্স-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপিত হিসেবে স্বাস্থ্যসেবাসহ চিকিৎসকদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন।

তিনি সাউথ এশিয়ান সার্জিক্যাল কেয়ার সোসাইটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এ্যালমুনাই এ্যাসোসিয়েশন-এর সাবেক চেয়ারম্যান, স্বাচিপ, বিএসএমএমইউ ব্রাঞ্চ-২০০০-২০০৩-এর সাবেক সভাপতি, এ্যাশিয়ান কংগ্রেস অফ নিউরোসার্জিক্যাল সার্জন্স-এর সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক সেক্রেটারি, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউরোসার্জন্স-এর সাবেক সভাপতি (২০০৮-২০০১২) ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক (১৯৯৮-২০০২), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ স্পোর্টস মেডিসিনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সোসাইটি অফ সার্জন্স অফ বাংলাদেশ-এর সাবেক সভাপতি (২০১২-২০১৪) ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ নিউরোসার্জন্স, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ সার্জন্স, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি এবং স্বাধীনতা চিকিৎক পরিষদের আজীবন সদস্য।

গত ১৫ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জনাব বদরুন নাহার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিএসএমএমইউর চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে তিন বছর মেয়াদে নিয়োগ প্রদান করেছেন।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়