Ameen Qudir
Published:2018-02-15 16:59:52 BdST
ডা. জাকারিয়া স্বপন বন্ধু, সহপাঠি ও সহকর্মীদের স্মৃতিতে যেমন
ডাক্তার প্রতিদিন
_____________________
অধ্যাপক ডা. এ, এস, এম জাকারিয়া স্বপন ছিলেন একালের যুধিষ্ঠির । ছিলেন সাহসী পরোপকারী। তাকে ঘিরে কত স্মৃতি সহকর্মী , শুভানুধ্যায়ী ও সহপাঠীদের। তারই কিছু স্মৃতিকথা নিয়ে এই আয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহসান হাবীব হেলাল শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে বলেন, বিদায়
দ্রোহ, ভালোবাসা, নীতিতে অটল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুধিষ্ঠির এ, এস, এম জাকারিয়া স্বপন।
পরকালে শান্তিতে রেখো বিধাতা
গাজীপুরের বিএমএ নেতা ডা. আমির হোসাইন রাহাত এক দীর্ঘ স্মৃতিকথায় লিখেছেন ______________
২০১৪ সাল আমার জন্য এক কঠিন বছর। অতি উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তার অকারণ তীব্র আক্রোশে আমি চিড়াচ্যাপটা। কিছু ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় তৎকালীন সেই পরাক্রমশালী কর্মকর্তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমাকে নিঃশেষ করে ফেলার জন্য।
পদপদবী লোভী আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অনুগামীদের অনেকেও যোগ দিয়েছে সেই পরাক্রমশালীর দলে। আমি আশ্রয় খুঁজে পাইনা কোথাও।
এমন কঠিন দুঃসময়ে ছোট ছেলে আরিয়ান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো। কি যে ভয়াবহ বিধ্বস্ত মানসিক অবস্থা আমার! আমি ছাড়া আর কেউ তা জানেনা।
আমি হাল ছাড়িনি, আমি ভেঙ্গে পড়িনি, আমি আত্মসমর্পণ করিনি।
আমি আশ্রয় ঠিকই খুঁজে পেয়েছিলাম। সে কঠিন যুদ্ধের কথা অন্য এক সময় বলবো।
ছেলেকে নিয়ে বিএসএমএম ইউ তে যেতে হতো প্রতি সপ্তাহে। আর ওখানে গেলে কোনদিন ইকবাল আর্সলান স্যারের রুমে যেতাম, কখনো জাকারিয়া স্বপন ভাইয়ের রুমে যেতাম,পরিচিত অনেকের সাথে দেখা করতাম।
স্বপন ভাই
স্বপন ভাইয়ার রুমে গেলে তিনি খুব আন্তরিকতা নিয়ে আমার ছেলে আরিয়ানের সাথে কথা বলতেন, ওর চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতেন, জিজ্ঞেস করতেন ও কি খাবে? আরিয়ান একদিন বললো, সিঙ্গারা খাবে। স্বপন ভাই লোক ডেকে দ্রুত সিঙ্গারা আনালেন। আরিয়ান দুই তিনটা সিঙ্গারা খেয়ে ফেললো, আমি অসস্তি বোধ করছি, স্বপন ভাই ওকে উৎসাহ দিচ্ছেন খাওয়ার জন্য।
এরপর যতোদিন স্বপন ভাইয়ের রুমে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছি প্রতিদিন তিনি সিঙ্গারা আনিয়েছেন আমার ছেলের জন্য।
জিজ্ঞেস করতেন ডাক্তার দেখিয়েছি কিনা? দেখাতে যাবো বললেই তিনি ফোন করতেন আরিয়ানের চিকিৎসককে। আমি কোনদিন ভুলবোনা স্বপন ভাই!
পরিচিত কোন রুগীর ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনে ফোন করেছি প্রোক্টর স্বপন ভাই ব্যবস্থা করেছেন। রোগী ভর্তি করতে হবে, কেবিন লাগবে- স্বপন ভাইকে বলেছি আর ব্যবস্থা হয়নি এমন ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি।
স্বপন ভাই অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন- তার সুস্থতার জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি। স্বপন ভাই, আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ভালোবাসা দিবসে আপনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন দূর অজানা দেশে। আপনার সাথে আর দেখা হবেনা কোনদিন। কিন্তু আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায়।
ডা. আমির হোসাইন রাহাত
Associate Professor of Anesthesiology, MOHFW, GOB. President,Swachip and BMA Gazipur.
ডা. লেখক মনোবিজ্ঞানী জিল্লুর কামাল তাঁর স্মৃতিচারণ করেন এ ভাবে ________
ক্লাসমেট, বন্ধু, বিএসএমএমইউ-র প্রোভিসি জাকারিয়া স্বপন আর নেই
- সংবাদটা আমার জন্য পরিস্কার আকাশ থেকে বজ্রপাত। ও আমাকে ডাক নামে ডাকতো।
কেউ আর আমাকে দেখেই ডাকবে না- আরে দোস্ত, পন্ডিত কেমন আছিস।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার তুষার এনায়েত লিখেছেন, এ এস এম জাকারিয়া স্বপন ভাই ,
বড় অসময়ে চলে গেলেন আপনি। ছাত্র রাজনীতির গন্ডি পেরিয়ে পেশাগত রাজনীতিটার হাতেখড়ি হয়েছিল আপনি এবং অধ্যাপক ডাঃ এমএ আজিজ ভাই , জুলফিকার লেনিন ভাই দের ভালবাসার ছায়াতলেই । আপনার কাছেই পেয়েছিলাম বড় ভাইসুলভ ভালবাসা - পিতার শাসন। শুধু দিয়েই গেলেন সারাটা জীবন আমাদেরকে সবটা উজার করে।
কৃতজ্ঞতা পাহাড় সমান ।
এক রাশ অভিমান আমি সহ বিশ্ববিদ্যালয় এর অগনিত নেতাকর্মীর বুকের গভীরে আগ্নেয়গিরির লাভার মত চাপা পড়ে রবে আজীবন। কখনোই আর আপনাকে বলা হবেনা। গ্রুপিং- লবিং নির্বিশেষে প্রতিটি কর্মীর মনের গভীরে আপনি বেঁচে থাকবেন অনন্ত কাল।
ক্ষমা করে দিয়েন আমাদের সকল ভুল ত্রুটি ।।
ভাল থাকবেন পরপারে ।।
________________
আপনার মতামত দিন: