Ameen Qudir

Published:
2017-07-29 19:49:18 BdST

ন্যাসভ্যাক ট্রায়াল : ডা. মামুন স্বপ্নীল ও ডা. ফজলে আকবর সাফল্য


 

 

 

ডাক্তার প্রতিদিন ডেস্ক

 

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ নামে নতুন একটি ওষুধের সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক ব্যবহার সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশের দুই চিকিৎসা বিজ্ঞানী। তারা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর।
কিউবায় এরই মধ্যে তাদের উদ্ভাবিত নতুন এই ওষুধের ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে আইনি জটিলতায় বাংলাদেশে নতুন ওষুধটির ব্যবহার এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি। জটিলতা দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন।

 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণে রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি বা লিভারের স্থায়ী রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগ থেকে পরে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারও হতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসারের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। প্রতিবছর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লিভারের বিভিন্ন রোগে মারা যান ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।


হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০ বছর গবেষণা করেছেন ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণার জন্য বিশ্বে স্বীকৃত। একই সময়ে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় এক হাজার রোগী নিয়ে গবেষণা করেছেন ডা. মামুন আল মাহতাব। বাংলাদেশসহ বিশ্বের হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ ওষুধ সুফল বয়ে আনতে পারে বলে ওই দুই চিকিৎসকের গবেষণায় উঠে এসেছে।


ওষুধটি বাংলাদেশে কেন ব্যবহার করা যাবে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, গবেষণা চালিয়ে সাফল্য পাওয়া গেলেও ওই ওষুধের নিবন্ধনের বিষয়ে কোনো আইন নেই। যে কারণে দেশে এখনই ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করা যাবে না। ওষুধের গুণগত মান বিচারে নিবন্ধনের বিধি যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে।


এদিকে ওষুধ প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ন্যাসভ্যাক নিয়ে গবেষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। মে মাসে ওষুধসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। বৈঠকে ন্যাসভ্যাক গবেষকদের সাফল্য তুলে ধরা হবে। এরপর ওষুধ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে। বাংলাদেশে এই ওষুধের ব্যবহারের বিষয়ে তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।


নতুন ওষুধ ‘ন্যাসভ্যাক’ সম্পর্কে ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস চিকিৎসায় ‘ন্যাসভ্যাক’ কিউবা ও জাপানে প্রাথমিক গবেষণায় অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল প্রমাণিত হয়েছে। এরপর আমরা দেশে ‘ক্রনিক হেপাটাইসিস বি’ রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিয়ে বেশ সাফল্য পেয়েছি। দেশে এই ওষুধের ব্যবহার চালু করা গেলে হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসবে।


তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে ১৮ জন ক্রনিক হেপাটাইটিস রোগীর ওপর ন্যাসভ্যাকের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করি। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাস চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্য সব ওষুধের তুলনায় এটি বেশি নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ন্যাসভ্যাক ব্যবহারে শতকরা ৫০ ভাগ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগীর রক্ত থেকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে। আর শতভাগ রোগীর লিভারের প্রদাহ পুরোপুরি ভালো হয়েছে।


উল্লেখ্য, ন্যাসভ্যাকের এই সাফল্যের খবর এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় লিভার অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল ‘হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল’-এ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের নভেম্বর সংখ্যায়। এরপর ১৫১ ক্রনিক রোগীর ওপর ন্যাসভ্যাকের তৃতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। ট্রায়ালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও এফডিএ এবং বাংলাদেশের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতি নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিএসএমএমইউ এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের ইথিক্যাল অনুমতিও নেওয়া হয়। ট্রায়ালে ৭৫ ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগীকে ১০ বার দেওয়া হয় ন্যাসভ্যাক। বাকি ৭৬ জনকে ৪৮ বার দেওয়া হয়। বর্তমান বিশ্বে হেপাটাইটিস বি চিকিৎসায় অন্যতম কার্যকর ও সবচেয়ে দামি ওষুধ ‘পেগাইলেটেড ইন্টারফেরন’। ৬ মাস পর দেখা যায়, পেগাইলেটেড ইন্টারফেরন ব্যবহারে ৩৮ শতাংশ রোগী উপকৃত হয়েছেন। বিপরীতে ন্যাসভ্যাকে আরোগ্য লাভ করেছেন ৫৯ শতাংশ রোগী। এক বছর পরও ন্যাসভ্যাক ওষুধ গ্রহণকারী রোগীর শরীরে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ট্রায়ালটি লিভার বিশেষজ্ঞদের সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স হিসেবে স্বীকৃত আমেরিকান লিভার মিটিংয়ে ‘ ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিস্টিংশন পদক’ লাভ করে। এরপরই এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত শুরু হয় কিউবায়। দেশটিতে ‘হেবার-ন্যাসভ্যাক’ নামে বিক্রি হচ্ছে ওষুধটি। রাশিয়ায় চলছে মাল্টিসেন্টার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। জাপানেও ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই সেখানে চালানো হবে ট্রায়াল।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়