Ameen Qudir

Published:
2017-05-28 17:05:16 BdST

প্রক্টর পদে থেকে কিভাবে একজন শিক্ষক এরকম সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার হুমকি দেন ?



ডা. জাহিদুর রহমান
_____________________

আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রক্টরের স্বাক্ষরিত যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হয়েছে, সেটা পড়ে যে কোন মানুষেরই উনার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ হবে। দেশের সবচে বড় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর পদে থেকে কিভাবে একজন শিক্ষক এরকম সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার হুমকি দেয়?

 

শিক্ষকদের কাছে তার ছাত্রছাত্রী বলে সন্তানের মতই আপন। সেন্ট্রালে পুলিশের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সন্ত্রাসী হামলা ও চিকিৎসক মারধরের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হবার পর যেখানে উনার প্রথমেই গন মাধ্যমে সবকিছুর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি রক্ষা করার জন্য সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আশ্বাস দেয়ার কথা, সেখানে তিনি বললেন, মামলা করলে তার ছাত্রছাত্রীরা আবারও একই রকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করবে? এবং সেটার কোন দায় দায়িত্ব কেউ নিবে না?

 

মানে সেন্ট্রাল হাসপাতাল মামলা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা হাসপাতাল ভাঙ্গতে, ডাক্তার পপেটাতে ছুটে আসবে? কোন তৃতীয় পক্ষের উস্কানি ছাড়া এরকম উস্কানিমুলক বক্তব্য কেউ দিতে পারে? উনি কোন বিচার বিবেচনায় গুটিকয়েক উশৃংখল ছাত্রদের বাঁচাতে পুরো প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রদের সন্ত্রাসী বানাতে চাচ্ছেন? আমরা কি এখন মধ্যযুগে আছি? অবশ্য উনিই কিন্তু সেই ব্যক্তি যিনি ভিডিও ফুটেজ দেখার পরও বলেছিলেন "পহেলা বৈশাখে কোন যৌন হয়রানি হয়নি"। উনার পক্ষেই সম্ভব সেন্ট্রালের ভিডিও ফুটেজ দেখার পর এলাকার মাস্তানদের মত হুমকি দিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিক্টিমকে আদালতে যেতে মানা করা। অফিসিয়ালি।

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ভিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে উনার বক্তব্য জানতে চাই। কারন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোন একটি অশুভ চক্র সুকৌশলে পুরো ডাক্তার সমাজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। তা না হলে সহজে সমাধানযোগ্য একটি বিষয় নিয়ে এত দীর্ঘস্থায়ী বিবাদ সৃষ্টি হবার কথা না। এতই যদি মামলা মোকাবেলা করার ভয়, তাহলে কেন তিনি কোন কিছু বিচার বিবেচনা না করে হুট করে ৮ জন ডাক্তারের নামে হত্যা মামলা করলেন? উনার উপস্থিতিতেই তো ছাত্ররা যাবতীয় অপকর্মগুলো করেছে। তাহলে কিভাবে উনি ধরে নিলেন সেন্ট্রাল হাসপাতালের সিসি ক্যামেরাগুলোতে কিছুই রেকর্ড করা হচ্ছে না? ডাক্তারদের একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন বিএমএ এবং তাতে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাচিপের ফুল প্যানেল জয়ী হয়ে বর্তমান বিএমএ পরিচালনা করছে। কি হিসেবে তিনি বিএমএর উচ্চ পর্যায়ের কোন নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছাড়া আপোষ করে ফেললেন? নাকি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়ে পরলে মানুষ যে স্বাভাবিকভাবেই সেন্ট্রালের পক্ষে অবস্থান নিবে, এটা তিনি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন? এবং সেই হিসেবেই বিএমএকে পাশ কাটিয়ে সেন্ট্রালের সাথে আপোষ করে ফেলতে চাইলেন?

আশা করি সেন্ট্রাল হাসপাতাল মামলা করলে এই প্রেস রিলিজটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজে আসবে।

আর উনি সেন্ট্রালের সাথে আপোষ করার মাধ্যম হিসেবে যে "চিকিৎসক" নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা অফিশিয়ালি বললেন, আমরা সাধারন ডাক্তার হিসেবে বিএমএর কাছে তাদের নাম জানতে চাই। অফিসিয়ালি।

আপনারা ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী দেখেছেন, ক্ষমতার লোভে আপোষ করা ডাক্তার নেতা দেখেছেন, প্রতিবাদী ডাক্তার দেখেননি। কিন্তু দেশের মানুষ দেখেছে। ৫২, ৭১, ৯০, ২০০৮ এদেশের তরুন ডাক্তাররা দেখিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসের পথে না যেয়েও প্রতিবাদ করা যায়। আপনারাও দেখবেন। রাষ্ট্র, জনগন, নিজ স্বার্থে স্বজাতির মান সম্মান, নিরাপত্তা জলাঞ্জলি দেয়া নেতা, এই ত্রিমুখী চাপে প্রতিবাদ ছাড়া এদের কাছে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার আর কোন পথও অবশ্য খোলা নেই।

______________________________

 

ডা. জাহিদুর রহমান, লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক। চিকিৎসা পণ্য সঠিক দামে সুলভে প্রাপ্তি আন্দোলনের পুরোধা।

আপনার মতামত দিন:


বিএসএমএমইউ এর জনপ্রিয়